ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৩ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

তিস্তা নদী গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
তিস্তা নদী গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা

নীলফামারী: দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাস ঘিরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির চাপ বাড়ছে। এটি বিধ্বস্ত হলে তিস্তা নদী গতিধারা পাল্টে যেতে পারে। এমনই আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

১৯৮৮ ও ৯৬ সালের চেয়েও সবচেয়ে এবার ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা করছে নীলফামারী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার লাখো মানুষ। উজানের লাগামহীন ঢলের পানি অব্যাহতভাবে ধেয়ে আসায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে অবনতি হচ্ছে।

স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি। ভাঙছে রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পাকা ও কাঁচা সড়ক ডুবে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র মতে, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে রোববার দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডিমলা উপজেলার তিস্তা চরের গ্রামগুলোর ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। ওইসব গ্রামের রাস্তঘাট, ব্রিজ কালভাট, হাট বাজার বলতে কিছুই নেই। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের ফরেস্টের চরের সাতশ পরিবার, ভেন্ডাবাড়ি চরের দুইশত পরিবার, খালিশাচাপানীতে এগারোশ পরিবার,খগাখড়িবাড়িতে তিনশ পরিবার, পূর্বছাতনাইয়ে ৮৯২ পরিবারের বসতঘরের ভেতর দিয়ে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে করে জেলার ডিমলা উপজলায় প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় বাঁধ,উঁচু সড়ক, আশ্রয়কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা। এর মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বানভাসী মানুষের মধ্যে। অনেকের ঘরে খাবার থাকলেও তা রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছেন না তারা। এতে করে বানভাসীদের মধ্যে শুকনা খাবারের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর বন্যা আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য ১৫০ মেট্রিক টন চাল, দেড় হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। শুকনা খাবারগুলো দেওয়া হলেও এখনও চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়নি।

জনপ্রতিনিধিরা জানায়, চালের পরিবর্তে শুকনা খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ করা যেতে পারে। বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোতে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

এদিকে ডিমলা উপজেলার বন্যায় প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। মেডিকেল ক্যাম্পগুলোতে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও জ্বর-সর্দি কাশির ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন।

ডিমলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার জানান, তিস্তার বন্যা ও ভাঙনে ডিমলা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের গ্রাম ও চর এলাকা ভাঙনের কবলে রয়েছে। আমরা সরকারের দেয়া নৌকায় বানভাসীদের উদ্ধার করছি। এ ছাড়া ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, গত দু’দিনের চেয়ে তিস্তার পানির উজানের ঢল কমে এলে এখনও বিপদসীমার নিচে নামেনি। বিপদসীমার (৫২.৬০) ৫০ সেন্টিমিটার থেকে নেমে এখন ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিস্তা অববাহিকায় হলুদ সংকেত জারি অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।