কারণ যখন পাটের বীজ বপন করেন তখন যমুনার বুক শান্ত ছিল। সময়ের ব্যবধানে শান্ত যমুনার সেই বুক মুহূর্তে হিংস্র রূপ ধারণ করে।
কৃষক ছমির উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, মরার যমুনা পাট গিলে নিলো। সঙ্গে কষ্টের জমানো টাকাও গেলো। হাড়ভাঙা পরিশ্রমও বৃথা গেলো। বসতভিটাও কেড়ে নিলো। এভাবে হিংস্র যমুনায় সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা তার মতো অসহায় কৃষকরা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের হাসনাপাড়া গ্রোয়েন বাঁধের আগে যমুনার চরে বসবাস করতেন কৃষক ছমির উদ্দিন। বসতভিটাসহ ফসলি জমি হারিয়ে কোনো রকম প্রাণটা নিয়ে এই গ্রোয়েন বাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি ও তার পরিবার।
শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, যমুনা পয়েন্টে পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে যমুনার পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার প্রায় ৮ হাজার হেক্টরের অধিক জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে পাট, রোপা আউশ, রোপা আমন বীজতলা, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, মরিচ ও আখ রয়েছে।
মফিজ উদ্দিন নামে এক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, তিনি যমুনার চরে প্রায় তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন। এরমধ্যে দেড় বিঘার মতো জমির পাট কেটে যমুনার পানিতে জাগ দিয়ে রেখেছিলেন। বাকি পাট জমিতেই ছিল। বন্যায় ক্ষেতের পাট তলিয়ে গেছে। আর তীব্র স্রোতে পানিতে জাগ দেওয়া পাট ভেসে গেছে। বসতবাড়িও পানির নিচে। যমুনায় সবকিছু হারিয়ে তিনিও পরিবার নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কুতুবপুর অংশে আশ্রয় নিয়েছেন।
কৃষক রোস্তম আলী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বতীর ঘেঁষে আউশ ধান লাগিয়েছিলেন। একইভাবে আউশ ধান ও রোপা আমনের বীজতলা করেছিলেন কৃষক বাবলু মিয়া। তাদের ধানক্ষেত ও রোপা আমন বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সঙ্গে বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে।
এসব কৃষকরা জানান, যমুনার বিভিন্ন চরে তারা বসবাস করেন। একাধিকবার যমুনার ভাঙনের শিকার হয়ে তাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড একেবারে ভেঙে গেছে। বর্তমানে শরীরের ওপর ভর করে বেঁচে আছেন তারা। সারাদিনের খাটুনিতে চলে তাদের সংসার। কিন্তু বন্যায় তাদের কাজ-কর্মের পথও আপাতত বন্ধ।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাদের সিংহভাগ মানুষই গৃহহারা হয়ে এক কাপড়ে কোনো মতে বাঁধে বা অন্য কোনো উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। বসতবাড়ির সঙ্গে তাদের মতো কৃষকদের ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, শনিবার পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার ৮৫০টি। ক্ষতির দিকে দিয়ে এগিয়ে রয়েছে পাট। কারণ প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির পাটক্ষেত বন্যার পানিতে পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এরপরের তালিকায় রোপা আউশ ও রোপা আমন বীজতলা রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আংশিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো করা হয়নি। এছাড়া আর্থিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও এখনো নিরূপণ করা হয়নি। বন্যার পানি নেমে গেলে এসব হিসাব করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককের আর্থিক প্রণোদনার বিষয়ে ফরিদুর রহমান জানান, এটা সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানো হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে যে ধরনের নির্দেশনা আসবে পরবর্তীতে সে অনুযায়ী, কৃষি বিভাগ কাজ করবে বলে যোগ করেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
এমবিএইচ/আরবি