শনিবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে লাজ, লজ্জা ভুলে এভাবেই দুর্দশার বর্ণনা দেন চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণওয়ারী আবাসনে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্ত কোপিলা বেগম (৪৫), নমিজন (৩৫), পারুল বেগম (৩৫) সহ আরও অনেকে।
তারা আরও বলেন, আশ্রায়নের ল্যাট্রিনের ভেতরে, বাইরে এক হাঁটু থেইক্যা এক কোমর পানি।
রোববার (২১ জুলাই) সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় মানুষের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট বেড়েছে। সেইসঙ্গে শৌচকর্ম সারার ব্যবস্থা না থাকায়, প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নারী-শিশু-বৃদ্ধ।
কেউ কষ্ট করে দু’মুঠো চাল সেদ্ধ করলেও তরকারি না থাকায় শুধু শুকনো ভাত খাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না। এমনই দুর্ভোগে রয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলার সাড়ে ৮ লাখ বানভাসি মানুষ। পানির উপর শৌচকর্ম সারায় বাড়ছে পানিবাহিত রোগের সম্ভাবনা। বন্যা স্থায়ী হওয়ায় ইতোমধ্যে পানিবাহিত রোগ-ব্যাধির সংখ্যা বাড়ছে।
শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চার শিশু ও এক বয়স্ক ব্যক্তি চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয় ১৩ শিশু, সাত নারী ও সাত পুরুষ রোগী। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার আব্দুস সালাম।
এদিন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে চিলমারী উপজেলার খামার বাঁশপাতারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রমনা রেলস্টেশনের উত্তরে রেললাইনের নিচ থেকে ১৫০ মিটার এলাকার মাটি পানির তোড়ে সরে যাওয়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের পানির তোড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ৭৮টি পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় এক হাজার ২৪৫ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কিলোমিটার বাঁধ ও ৪১টি ব্রিজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি। প্রায় ২ লক্ষাধিক গবাদিপশু পানিবন্দি। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৮৫টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে।
বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ সামর্থ অনুযায়ী, ত্রাণ বিতরণ করছে। বেসরকারি এনজিওগুলো এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে। ডোনার সহায়তা না করায় তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
অপরদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে এলেও তা একেবারেই নগণ্য। ফলে বানবাসীদের মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, সব বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৮০০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছয় হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
এফইএস/আরবি/