তুবা জানে না তার মা কোথায়? মা ফিরে আসার অপেক্ষায় গত তিনদিন ধরে এখনও সে বসে আছে! কিন্তু রাত পেরিয়ে দিন এলেও মা আসেনি দেখে- ঘুম থেকে উঠেই ফের কাঁদছে। কেউ জিজ্ঞাসা করলেই বলছে, ‘মা ড্রেস আনতে নিচে গেছে’।
কিন্তু মা তো আসছে না, তার কান্নাও থামছে না। অবুঝ শিশুটিকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না কেউ। তার কান্নায় শোক ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের মানুষজনের মাঝেও। শোকের মাতম চলছে নিহত তাসলিমা রেনুর স্বজনদের মধ্যেও।
তাসলিমার আত্মীয় নূরজাহান বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ছোট্ট শিশুর কান্নায় আমরা আর সইতে পারছি না। সে তার নানি ও খালাদের সঙ্গে থাকবে। তবে ভবিষ্যতে কী হয় আল্লাহ-ই ভালো জানেন!
পড়ুন>>ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা, শেষ কোথায়?
রেনুরা একভাই ও পাঁচবোন। তিনি ছিলেন সবার ছোট। পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছেন। টিউশনিও করাতেন। পারিবারিক কলহের কারণে বছর দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ ঘটে।
বিচ্ছেদের পর ছেলে তাসফিক আল মাহী (১১) বাবার সঙ্গেই থাকছে। আর মেয়ে তাসলিমা তুবাকে (৪) নিয়ে তিনি থাকতেন মহাখালীতে।
স্বজনেরা জানান, আগামী বছরের জানুয়ারিতে বড়ভাই আলী আজগরের কাছে আমেরিকায় যাওয়ার কথা ছিল রেনুর। কিন্তু একেবারে পরপারেই চলে গেলেন তিনি। নির্মম মৃত্যু তাকে কেড়ে নিল না ফেরার দেশে।
গত ২০ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
মেয়েকে ভর্তির জন্য ওই স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পরে রোববার (২১ জুলাই) রাতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর সোনাপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাসলিমা রেনুকে দাফন করা হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও স্থানীয় লোকজন তার জানাজায় অংশ নেন।
গুজব ছড়িয়ে এই নিরীহ নারীকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এসআর/এমএ