ছেলেধরা গুজব নিয়ে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সাইবার ক্রাইম যারা করেছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে যারা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছেন, আমাদের পুলিশ কিন্তু বসে থাকবে না।
‘সোশ্যাল মিডিয়া এতোই আমাদের দেশে ইউজ করেন, দেখেন- একটা ফিগার শুনলেই তো এখন আঁতকে উঠতে হয়। এতো মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। আমরা সেই জায়গাটিতেই বলি, সোশ্যাল মিডিয়ার সবকিছুই খবর যেন কেউ বিশ্বাস না করেন, সঠিক প্রমাণ কেউ না পেয়ে যেন আইন হাতে না তোলেন। ’
কেউ যেন অহেতুক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উত্তেজিত না হয়ে ঘটনা জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করেন, পরামর্শ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যারা সোশ্যাল মিডিয়াকে সম্বল করে এ ধরনের ঘটনা ছড়িয়েছে তাদের চারজনকে গ্রেফতার করেছি। পৃথিবীর কোনো জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা- আমার জিজ্ঞাসা সেটা। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য ছিল, উদ্দেশ্যমূলকভাবেই হয়তো তারা ঘটিয়েছে।
গণপিটুনিতে হত্যার পিছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, একটা উদ্দেশ্য, একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, একটা কনফিউশন, মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যই…। একটা সাধারণ মানুষ, সাধারণ শ্রমিক, যারা অশিক্ষিত; তারাও বোঝে একটা ব্রিজ তৈরি করতে মানুষের কোনো মাথা লাগে না। তাহলে কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে? এগুলোর নিশ্চয়ই উদ্দেশ্য আছে, আমরা সবগুলোই দেখছি। কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলে আমরা দেখছি এবং ব্যবস্থা নেবো।
মন্ত্রী বলেন, বিরাট দেশ, এখানে কারও সঙ্গে কারও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়েই যেতে পারে। হঠাৎ করেই এ ধরনের ঘটনাগুলি ঘটে। যেখানেই গুজব সেখানেই যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অ্যাকশনে যেতে পারে- সে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গণপিটুনিতে এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫ জন। মামলা হয়েছে নয়টি, জিডি হয়েছে ১৫টি। সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন ৮১ জন।
মামলাগুলো দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে কিনা- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমরা মামলাগুলোর দ্রুত সম্ভব অভিযোগ দিয়ে দেবো। তাড়াতাড়ি যাতে বিচার হয় সেটারও আমরা ব্যবস্থা নেবো। দ্রুত বিচার হলেই যে খুব তাড়াতাড়ি বিচার হবে, তেমন তো কোনো কথা নয়। আমরা কত তাড়াতাড়ি অভিযোগপত্র দিতে পারি সেটাই বড় ব্যাপার।
সম্প্রতি বাড্ডায় এক নারীকে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা সারা দেশবাসীকে ব্যথিত করেছে। আমরা এ ঘটনা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কেন ঘটনা ঘটালো, ঘটনার ভিডিওফুটেজ দেখে আমরা সাতজনকে গ্রেফতার করেছি, যারা যারা ছিল সবাইকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
মানসিক প্রতিবন্ধীকেও এই পিটুনির শিকার হতে হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সমাজের যে শাসন বোধহয় অবক্ষয় হয়েছে সেজন্য এ ধরনের ঘটনা আমাদের দেখতে হচ্ছে। এনজিকর্মীকেও এ ধরনের ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখেছি ধামরাইয়ে ব্যক্তিগত কারণে এ ধরনের রটনা রটিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কুনিপাড়ায় বাচ্চাদের রাখার জায়গায় বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রত্যেক মসজিদের ইমাম, স্কুল-মাদ্রাসায় যেন বলা হয় এ ধরনের গুজবে যেন কেউ কান না দেয়, বলেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ