পরিবারের অভিযোগ, সেদিন সালমার তিন মেয়েকে দেখতে গিয়েছে বলে তাকে ‘ছেলেধরা’ বানিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে নিহতের চাচা কোহিনূর ইসলামের সঙ্গে বাংলানিউজের কথা হলে এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, তার ভাতিজি সালমার সঙ্গে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মিজানুরের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ১২ বছর আগে মিজানুর তার ভাতিজিকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করেন। তবে মিজানুর তাদের তিন মেয়ে মিতা, মনিকা ও মিসকাতকে তার কাছেই রেখে দেয়। আর সালমা ডিভোর্সের পর থেকে মানিকগঞ্জে সিঙ্গাইরের মুসলিমাবাদ এলাকায় তার বাবার বাসায় থাকতো ও মাঝেমধ্যেই মেয়েদের দেখতে মিজানুরের বাড়িতে যেত। সাভারে এলে সালমা ব্যাংক কলোনি এলাকায় আমার বাড়িতেও আসতো।
তিনি আরও বলেন, সালমা তার মেয়েদের দেখতে ইমান্দিপুরে এলে মিজানুরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও স্বজনরা তাকে মারধর করতেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে আগেও সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর গত ২৫ দিন আগে মিজানুর বিদেশ থেকে সাভারের ইমান্দিপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। এর মধ্যে গত ২১ জুলাই (শনিবার) ভোরে সালমা বাবার বাড়ি থেকে ইমান্দিপুরে মিজানুরের বাড়ির উদ্দেশে বের হয়। পরে গত ২০ জুলাই (শনিবার) বিকেলে তার ভাতিজি সালমাকে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন তারা।
নিহত সালমার চাচা এ সময় অভিযোগ করে আরও বলেন, এ ঘটনায় স্বামী মিজানুর ও তার স্বজনরা সালমাকে ‘ছেলেধরা’ অজুহাতে গণপিটুনির দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তবে সালমা মানসিকভাবে কিছুটা বিকারগ্রস্ত ছিল বলেও জানান তিনি।
এর আগে বুধবার বিকেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেন।
নিহত সালমা মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানার মুসলিমাবাদ গ্রামের বিল্লাল বেপারির মেয়ে বলে নিশ্চিত করে পুলিশ।
নিহতের পরিবারের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমারত হোসেন বলেন, তেঁতুলঝোড়া এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত নারীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত সালমা নামে ওই নারী মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি ২১ জুলাই দুপুরে তেঁতুলঝোড়ায় বাসা ভাড়া নিতেই গিয়েছিলেন।
তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি তার জানা নেই জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এমারত আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নিহতের স্বামী মিজানুরের বাড়ির দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা থাকার কথা নয়।
গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় গত ২১ জুলাই অজ্ঞাতপরিচয় ৮০০ জনে বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অগ্রগতি ও গ্রেফতারের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এফএম সায়েদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
এএটি