ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কাস্টমস কর্মকর্তার বাসায় ঘুষ লেনদেনকালে অস্ত্রসহ আটক ৭

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
কাস্টমস কর্মকর্তার বাসায় ঘুষ লেনদেনকালে অস্ত্রসহ আটক ৭

রাজশাহী: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তার বাসায় গভীর রাতে অবৈধ অর্থ লেনদেনের সময় সাত জনকে আটক করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় ঘুষের ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৭ হাজার ডলার ও গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

বুধবার (২৪ জুলাই) রাজশাহী মহানগরীর উশহর এলাকার ওই বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়। অভিযানে ডিবির সঙ্গে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশও অংশ নেয়।

আটক সাত জন হলেন- আহসানুল কবির মিঠু, আবু সাইদ নয়ন, মনিরুল ইসলম জুয়েল, বায়োজিদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আবুল হাসান রুবেল ও আব্দুল মালেক।

গত কয়েকদিন ধরে তাদের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। এদের অধিকাংশই সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কর্মরত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বলে জানা গেছে।

বায়েজিদ হোসেনের বাড়ি সোনামসজিদ এলাকায়। আব্দুল মান্নানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজারামপুরে, নয়নের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে। এছাড়াও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশানের সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদের জামাতা আহসান কবির মিঠুর বাড়ি শিবগঞ্জের কালুপুর গ্রামে এবং আবু হাসান রুবেল সোনামসজিদ স্থলবন্দরের দায়িত্বে নিয়োজিত কাস্টমসের সহকারী কমিশনার বেলাল হোসেনের পিয়ন বলে জানা গেছে।

একটি সূত্র জানায়, আটক সাত জন সোনামসজিদ স্থলবন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন আমদানি পণ্যে শুল্কফাঁকিতে নিয়োজিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সদস্য। শুল্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন পণ্যে শুল্কফাঁকি দিয়ে আসছিলেন তারা।

জানতে চাইলে মহানগীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযানে উদ্ধারকৃত গুলি, পিস্তল, টাকা ও ডলার থানায় রাখা হয়েছে। এছাড়া আটক সাত জনকে মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, মহানগরীর উপশহর এলাকার ১৭১ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আইয়ুব আলী। ওই বাসভবনে প্রতিদিনই স্থলবন্দরের ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের টাকা ভাগাভাগি হতো।  

ওসি আরও বলেন, আটক সবাই সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানিকারক। পুলিশের যৌথ অভিযানের বিষয়টি টের পাওয়ার পর তারা সবাই অবৈধ টাকাসহ ওই বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাদের সাত জনকে হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়। তবে আইয়ুব আলীসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা পালিয়ে যান। তারা সেখানে মদ পান করছিলেন। তবে পিস্তলটি আব্দুল মালেকের লাইসেন্স করা বলে দাবি তার। বর্তমানে ওই আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

এর আগে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল যে, সোনামসজিদ স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আইয়ুব আলীর উপশহরের ওই বাসভবনে প্রতিদিনই মদের আসর বসে এবং সেখানে টাকা ভাগাভাগি হয়। সেখানে আইয়ুব আলী ভাগের টাকা ওই বাসায় নিয়ে কাস্টমস কমিশনার মজিবুর রহমান, সহকারী কমিশনার বেলাল হোসেনসহ কর্মকর্তাদের ভাগ তুলে দেন।  

বুধবার আটক মনিরুল ইসলাম জুয়েল নামের এক ব্যবসায়ীর মালবাহী দু’টি ভারতীয় ট্রাক দেশে প্রবেশ করে। ওই দু’টি ট্রাক থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব পাওয়ার কথা। কিন্ত ফাঁকি দিয়ে মাত্র ২০ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে তড়িঘড়ি করে তারা মালামাল বাংলাদেশের ট্রাকে তুলে নেয়। এই ফাঁকি থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা ভাগাভাগি হচ্ছিল ওই কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে। বর্তমানে তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে এই বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।  

এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে তাদের থানায় সোপর্দ করা হবে। এর পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
এসএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।