ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বানের পানিতে খাদ্য সংকটে পশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
বানের পানিতে খাদ্য সংকটে পশু নিয়ে বিপাকে খামারিরা মহিষ নিয়ে খামারি ছুটছেন নিরাপদ গন্তব্যে। ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: মাথায় গামছা, পরনে জিন্সের প্যান্ট ও ফুলহাতা গেঞ্জি। বগলে ছাতা ও হাতে ঝুলছে ব্যাগ। এসবকে সঙ্গী করে সড়ক পথে মহিষের বাথান নিয়ে ছুটছেন এক যুবক। সঙ্গে আরও দু’জন। যমুনা বেষ্টিত বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় তাদের বসতবাড়ি। বন্যার পানিতে বসতবাড়ির সঙ্গে ডুবে গেছে গরু-ছাগল-মহিষের খামার, খাল-বিল, ফসলের ক্ষেত। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট। এর কবল থেকে নিজেরা বাঁচতে পারলেও মহিষগুলোকে নিয়ে খামারিরা পড়েছেন সমস্যায়। এদের রক্ষায় উঁচু এলাকার সন্ধানে বের হতে হয়েছে তাদের।

গোবিন্দ তাদেরই একজন। কাঁচা-পাকা প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে মহিষের বাথান নিয়ে এসেছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়।

প্রায় ৫০টির মতো মহিষ নিয়ে স্থানীয় অদ্দিরগোলা মাঠে অবস্থান নিয়েছেন তিনিসহ বহু খামারি।

মহিষ পালক গোবিন্দ অনেকটা আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, যমুনার প্রত্যেকটি চর বন্যার পানিতে টইটুম্বুর। ফসল তলিয়ে গেছে। কিছু ফসলের মাথা দেখা যাচ্ছে যা পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এখানে আসা।

কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনার পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলগুলোর দুই লাখের অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে বন্যাকবলিত মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠার পাশাপাশি গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে মহিষ, গরু-ছাগলগুলো নিয়ে বিপদে পড়েছেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি বসতবাড়ি ও খামারগুলোতে ঢুকে পড়ায় মানুষের পাশাপাশি এ তিন উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার গরু, ৫৬ হাজার ছাগল, ২৫ হাজার ভেড়া এবং এক হাজার মহিষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে এখানে ৩২০টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চারণভূমি নষ্ট হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬২৫ একর জমির। এতে গবাদি পশুর অন্যতম খাদ্য ঘাসের যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন মালিকরা। খড় ও ভুষিসহ অন্য পশু খাদ্য নষ্টের পরিমাণ ৫ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। বন্যার পানিতে প্রায় ১৫টির মতো গবাদি পশু ভেসে গেছে। গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।  ছবি: বাংলানিউজশুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, বিকেল ৩টা নাগাদ যমুনার পানি ফের বেড়ে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বাঙালি নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৯০ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আগামী দু’একদিনের মধ্যে যমুনার পানি কমতে শুরু করবে। বাঙালি নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় নির্মিত ৪৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিমুক্তি রয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, গো-খাদ্যের সঙ্কট মোকাবেলায় খামারিদের বিকল্প নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গো-খাদ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

চলতি বন্যায় শুক্রবার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত জেলায় প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
এমবিএইচ/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।