শুক্রবার (২৬ জুলাই) বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানিতে তলিয়ে আছে বসতবাড়িসহ আউশ, আমন ধানের বীজ তলা, পাট ও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত।
বিগত ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে এবারের বন্যা।
বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান।
নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় গাইবান্ধা সদরের ১২টি, গোবিন্দগঞ্জে ১০টি, পলাশবাড়ীর ৩টি, ফুলছড়ির ৭টি, সাঘাটার ৯টি, সুন্দরগঞ্জের ৮টি ও সাদুল্যাপুরের ২টি ইউনিয়নে ঘরবাড়িসহ ধান, পাট, বীজতলা ও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ি আর
উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম কৃষি জমির ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাসভাসী মানুষ। সময় মতো চারা সরবরাহ না পাওয়া গেলে আমন চাষ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, এবারের বন্যায় সাত উপজেলার ১৪ হাজার ২১ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন
ধানের বীজতলা ২ হাজার ৮৮১ হেক্টর, আউশ ধান ৩ হাজার ১৯০ হেক্টর, শাক-সবজি ১ হাজার ১৭৭ হেক্টর, পাট ৬ হাজার ৬১৯ হেক্টর এবং অন্যান্য ১৫৪ হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে,বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২০টি পয়েন্ট ভেঙে-ধসে যাওয়ায় গাইবান্ধা জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার। বাদিয়াখালি-ত্রিমোহনী রেল লাইনে পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে এক কিলোমিটার এলাকার স্লিপার, ধসে গেছে পাথর। এতে এক সপ্তাহ ধরে গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া রেল যোগাযোগ চলছে বিকল্প পথে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪২৪টি গ্রাম ও ২টি পৌরসভার ৫ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৭০টি। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৯৭টি। ভেসে গেছে প্রায় ৬ হাজার ২৯০টি পুকুরের মাছ। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৫৯৩
কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ২৬৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ১৯ কিলোমিটার বাঁধ।
জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকায় ১ হাজার ৭০ মেট্রিকটন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, নগদ সাড়ে ১৯ লাখ টাকা ও বিশুদ্ধ পানির জন্য ১৫০টি টিউবয়েল ও ৫ হাজার বিশুদ্ধ পানির বোতল এবং ৫০০টি ত্রিপল বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে মজুত প্রায় ৮০ মেট্রিক টন
চাল, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ২০০টি ত্রিপল বিতরণের কাজ চলছে। এছাড়া দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য আরও ১ হাজার মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ৫ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বাংলানিউজকে জানান, বন্যা দুর্গতদের মধ্যে চর্মরোগ, হাতে ও পায়ের আঙ্গুলে ঘা ও এলার্জিসহ পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের সেবায় ১০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৯
আরএ