ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নদীর উন্মুক্ত জলাশয় দখল নিয়ে মাছচাষ!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
নদীর উন্মুক্ত জলাশয় দখল নিয়ে মাছচাষ! নদীর উন্মুক্ত জলাশয় দখল নিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: বাঁশের বেতি দিয়ে বানানো হয় বানা। সেই বিশাল আকারের বানা অনেকটা নিখুঁতভাবে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে নদীর পানিতে। বানাকে শক্তভাবে বেঁধে দিতে পুরো বাঁশকে খুঁটি বানিয়ে পানিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। বানার ওপর দিয়ে বিশেষভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল।

এভাবে উন্মুক্ত নদীর একটা বড় অংশ ঘিরে তৈরি করা হয়েছে জলাশয়। সেই ঘেঁর পাহারা দেওয়ার জন্য বানানো হয়েছে টিনের বেড়া ও ছাউনি বিশিষ্ট ঘর।

যেখানে রাত-দিনজুড়ে মানুষ থাকেন পাহারার কাজে। আর এভাবে নদীর উন্মুক্ত জলাশয় দখলে নিয়ে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

নদীর উন্মুক্ত জলাশয় দখল নিয়ে মাছ চাষ করায় দেশিয় প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি নদীর পানিতে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না এলাকার সাধারণ মানুষজন।

তাদের অভিযোগ, গোসল করতে প্রভাবশালীদের লোকজন নদীর ওই স্থানে নামতে দিচ্ছেন না। কাপড়-চোপড় পরিষ্কার করতে দিচ্ছেন না। এক কথায় নদীর পানিতে এলাকাবাসীর নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ।

তবে প্রভাবশালীদের ভাষ্য, নদীর বুকে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা অবৈধ-এমন আইন জানা নেই তাদের। আর এ ধরনের আইন থাকলেও জীবিকার তাগিদে কাজটি করা হচ্ছে। এছাড়া মাছ চাষের স্থানে নদীতে মানুষজনকে নামতে দিলে মাছের ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই চাষের স্থানের জলাশয়ে কাউকে নামতে দেওয়া হয় না।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের সোনারগাঁ গ্রামের মাঝ বরাবর বহমান মানাস নদীর জলাশয় দখলে নিয়ে পৃথক তিনটি স্থানে মাছ চাষ করছেন চারজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। অথচ অনেক আগেই প্রশাসনিকভাবে নদীটিকে উন্মুক্ত জলাশয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অন্তত প্রশাসনের এ ধরনের ঘোষণা থাকার পরও নদী দখলে নিয়ে মাছ চাষের ঘটনায় এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।

কারণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘোষণা জারি থাকার পরও সোনারগাঁ গ্রামে সেতুর উত্তর পাশে প্রায় ৭শ মিটারের মতো নদীর জলাশয় দখলে নিয়ে পৃথক তিনটি স্থানে আড়াআড়িভাবে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

একইগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নজরুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, রমজান আলী ও বিনয় চন্দ্র শীল এই কাজটি করছেন। প্রায় দু’মাস ধরে চলছে তাদের মাছ চাষের এ কার্যক্রম। কিন্তু প্রশাসনের সংশিষ্টরা তাদের বিরুদ্ধে এখন অবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।  

জীবন সরকার ও হামেদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, এই গ্রামে অন্তত ২শ’র মতো জেলে পরিবার বসবাস করেন। মানাস নদীসহ খাল-বিল এসব জেলের পরিবারের বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করায় তাদের উন্মুক্ত এই নদীর জলাশয়ে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে তারা মাছও শিকার করতে পারছেন না। এতে এই নদী থেকে তাদের আয়ের পথ বর্তমানে একেবারে বন্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ দখলকারীদের কবল থেকে নদী দখলমুক্ত করতে স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে কোনোভাবেই ওইসব প্রভাবশীলদের কাছ থেকে নদী স্থানীয়রা উদ্ধার করতে পারবে না। কারণ তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

অভিযুক্ত বিনয় চন্দ্র শীল বাংলানিউজকে বলেন, এর আগেও অনেকেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে এই নদীতে মাছ চাষ করছেন। এবারও করছেন। তাদের মতো আমিও মাছ চাষ করছি। তবে উন্মুক্ত জলাশয়ে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করা যায় না এমন আইন আমার জানা নেই। কিন্তু বেঁচে থাকার তাগিদে এছাড়া কিইবা করার আছে যোগ করেন বিনয় চন্দ্র শীল।

এদিকে নানাভাবে চেষ্টা করেও অপর তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।    

এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে ধুনট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের খবর জানা নেই। এছাড়া উন্মুক্ত নদী দখল করে মাছ চাষ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। খোঁজখবর নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।