ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘টেস্টে’র জন্য নেওয়া টাকা ৭ ঘণ্টা পর ফেরত আনসার সদস্যের

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
‘টেস্টে’র জন্য নেওয়া টাকা ৭ ঘণ্টা পর ফেরত আনসার সদস্যের

ঢাকা: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগের সামনে ফ্লোরে গায়ে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে শুয়ে ছিলেন মিজানুর রহমান (৩০) নামে এক ব্যক্তি। সঙ্গে তার সহধর্মিনী হাসিনা আক্তার। দু’জনকে দেখেই হতোদ্যম মনে হলো।

সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্যাথলজি বিভাগের সামনে পাটি বিছিয়ে মিজানুরকে শুয়ে থাকতে দেখে কথা বলে বাংলানিউজ। প্রথমে আলাপে তারা জানান, ডাক্তার দেখিয়েছেন সেই সকালে, কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শমতো রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট এখনো হাতে না পাওয়ায় চিকিৎসা হচ্ছে না মিজানুরের।

 

সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও রিপোর্ট না মেলার খবর বিস্তারিত জানতে চাইলে মিজানুরের স্ত্রী হাসিনা বলেন অপেক্ষার পেছনের কথা।

তার ভাষ্যে, রাজধানীর কদমতলীর রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা এ দম্পতি। পেশায় ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী মিজান দুইদিন ধরে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছেন। সকালে তাকে ঢামেকের বহির্বিভাগে এনে ৫ নম্বর রুমে ডাক্তার দেখানো হয়। সেখানকার ডাক্তার দ্রুত কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। সেই পরীক্ষার কাগজ নিয়ে নতুন ভবনে প্যাথলজি বিভাগে যান তারা। তখন সকাল সাড়ে ১০টা।  

হাসিনা বলেন, প্যাথলজি বিভাগের অনেক মানুষের ভিড় কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার স্বামীও জ্বরের কারণে হাঁটতে পারছিল না। তাই প্যাথলজি বিভাগের সামনের সিঁড়ির কোণায় ফ্লোরের ওপর তাকে শোয়ানো হয়। তখন কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।  

কিছুক্ষণের মধ্যেই পোশাকধারী এক আনসার সদস্য এসে মিজান-হাসিনার কাছে সমস্যা জানতে চান। তখন হাসিনা তাকে মিজানের প্রচণ্ড জ্বরের কথা বলেন এবং ডাক্তারের দেওয়া রক্তপরীক্ষার কথাও বলেন। তখন সেই আনসার সদস্য পরীক্ষার জন্য ৭৫০ টাকা লাগবে জানিয়ে একঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাইয়ে দেবেন বলেন হাসিনাকে। হাসিনা তখন ওই আনসার সদস্যকে তার কথা মতো ৭৫০ টাকা দেন। কিছুক্ষণ পর ওই আনসার আরেকজনকে নিয়ে এসে মিজানের হাত থেকে রক্ত নিয়ে যান।

বিকেল সাড়ে ৩টার সময় হাসিনা বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলো, এখনো আমি রিপোর্ট পাইনি। এরমধ্যে ওই আনসার এসে বলে গেছেন- ‘চিন্তা করবেন না, রিপোর্ট হাতে পেলে দ্রুত আপনাদের দেওয়া হবে’। অথচ আমার স্বামীর জ্বর বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে চিকিৎসকরাও বলেছেন- রিপোর্ট না দেখে কোনো চিকিৎসা করা যাবে না। যদি ডেঙ্গু হয়ে থাকে পরে অন্য চিকিৎসা দিলে সমস্যা হবে।

মিজান-হাসিনা দম্পতির এই ‘দীর্ঘ অপেক্ষা’র বিষয়টি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আজিজ আহমেদ খানকে জানানো হলে তখনই সেখানে ছুটে আসেন। মিজানকে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে বলেন- ‘তাড়াতাড়ি আপনার কাগজ দেন, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি’। এরপর মিজানের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠান ডা. আজিজ এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রিপোর্ট বের করে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার কথা জানান। এরপর রোগীকে নতুন ভবনের ছয় তলায় ভর্তি করানো হয়।

এ বিষয়ে ডা. আজিজ আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রক্ত পরীক্ষার পর জানা গেছে মিজান ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। দেরি না করে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আগে চিকিৎসা, পরে সব ব্যবস্থা। রোগী আগে সুস্থ হয়ে উঠুক, বিস্তারিত তার কাছ থেকে জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে বিভাগকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। যে আনসার সদস্য টাকা নিয়েছেন তার নাম বলতে পারেননি রোগী ও তার স্ত্রী। সুস্থ হলে রোগীর সঙ্গে কথা বলে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

অনেক রোগী পরীক্ষার জন্য আসছে বিধায় তাদের সামলাতে প্যাথলজি বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে বলেও দাবি করেন ডা. আজিজ আহমেদ।

পরে ভর্তি হওয়ার মিজানের সঙ্গে বাংলানিউজ কথা বললে তিনি জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে একটি মোবাইল নম্বর থেকে ওই আনসার সদস্য আমাদের কল করে বলেছেন- ‘রিপোর্ট হয়েছে রিপোর্ট নিয়ে যান’।

তখন মিজানের কাজ থেকে সেই মোবাইল নম্বর ০১৭৪৫২২০১৫৩  নিয়ে কল দেওয়া হলে রিসিভার বলেন, ‘আমি পরীক্ষার জন্য কোনো রোগীর কাজ থেকে টাকা নেইনি। ’ একবার বলেন, ‘আমি আনসার সাদ্দাম’, আরেকবার বলেন ‘আমি সাজ্জাত। কথা শেষ না হতেই কল কেটে দেন রিসিভার।

তারও কিছুক্ষণবাদে মিজানের স্ত্রী বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ওই আনসার সিভিল ড্রেসে এসে আমাদের টাকা দিয়ে যায়। নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম জানার দরকার নাই। যে সাংবাদিক ফোন দিয়েছেন ওনাকে বলেন, আমি টাকা দিয়ে গিয়েছি’।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।