ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঐতিহ্য ধরে রেখেছে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী আদর্শ পঞ্চায়েত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৯
ঐতিহ্য ধরে রেখেছে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী আদর্শ পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কর্মকাণ্ড

পঞ্চায়েত। সামাজিক ব্যবস্থার এক অন্যতম ধারক ও বাহকের সমষ্টি। পঞ্চায়েত প্রথা বাংলার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। পঞ্চায়েত বলতে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদকে বোঝায়। প্রাচীনকালে গ্রাম-সংসদ অথবা পঞ্চায়েত রাজার মনোনীত বা কোনো গ্রামের জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত হতো।

গ্রাম প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়  পঞ্চায়েতগুলিতে সব শ্রেণি ও বর্ণের লোকদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কালের পরিক্রমায় এখনো কিছু পঞ্চায়েত বা সেই সব সামাজিক ব্যবস্থা বিদ্যমান।

যদিও আগের মতো সেসব কার্যক্রম এখন তার তাদের মাধ্যমে হয় না। গ্রাম্য পটভূমিতে এখনো পঞ্চায়েতের স্রোতধারা মোটামুটি বহমান।  

রাজধানীতেও কয়েকটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এখনো টিকে রয়েছে, যেগুলোর বয়স প্রায় ৪/৫ যুগের ওপর। বিশেষ করে রাজধানীর লালবাগ, বংশাল, গেন্ডারিয়া এবং যাত্রাবাড়ীতে এখনো কয়েকটি পঞ্চায়েত সিস্টেম বা পদ্ধতি রয়েছে। এমনই একটি পঞ্চায়েত রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর আদর্শ পঞ্চায়েত। যাত্রাবাড়ীতে মোট ৫টি পঞ্চায়েত রয়েছে এর মধ্যে এই আদর্শ পঞ্চায়েত একটি। সম্প্রতি এ পঞ্চায়েতের কমিটি-২০১৯ গঠিত হয়েছে।  

হাজি নজরুল ইসলামকে প্রধান সরদার করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হয়েছে। অন্য সরদার হলেন- মুজাফ্ফর হোসেন, মুসলেহউদ্দীন আহম্মেদ, ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ, মো. আমির হোসেন, হাজি আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান ভাসানী, সোহরাব হোসেন, হাজি নাজির উদ্দীন আহম্মেদ, হাফেজ মাও: মো. তাজউদ্দীন, হাজি মো. নুরুল হক, মনির হোসেন, মো. আব্বাছ আলী, আবদুল হক, আনোয়ার হোসেন স্বাধীন, হাজী মো. মাকসুদ, অ্যাডভোকেট আফানুর আল মামুন, হাজি আবদুল বাসেদ, হাজি আবদুল গণি, হাজি এজাজুর রহমান, হাজি সাইজুদ্দীন আহাম্মেদ।  

সূচনালগ্ন থেকেই এ পঞ্চায়েত বিভিন্ন দাতব্য ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। সবচেয়ে আলোচিত যে উদ্যোগটি গত কয়েকযুগ ধরে তারা করে আসছে তা হলো পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কোরবানির মাংস বণ্টন। তাহলে একটু বিস্তারিত খুলেই বলা যাক।

এই পঞ্চায়েতের সদস্য বা 'ঘর' সংখ্যা হলো প্রায় ২২০। প্রতি কোরবানির ঈদে এদের মধ্যে গড়ে ৭০/৮০টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি দেড়শ পরিবার কোনো না কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারে না। ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাই তাদেরও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবণ্টন করে কোরবানির মাংস দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কোরবানি ঈদে এ পঞ্চায়েতে প্রায় ৬০টি পরিবার পশু কোরবানি দিয়েছে। তারা তাদের জবাই করা পশুর অর্ধেক পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে যান। আর বাকি অর্ধেক তাদের নিজেদের। এছাড়া সে জবাই করা পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দেন। এভাবে ৬০টি পরিবারের অর্ধাংশ করে মাংস জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করা হয়। অর্থাৎ গোশত দেয় ৬০টি পরিবার। কিন্তু ভাগ হচ্ছে পঞ্চায়েতের ২২০টি পরিবারের মধ্যে। আরেকটি বড় ভাগ দেওয়া হয় গরিব ও দুস্থদের মাঝে। অর্থাৎ যিনি কোরবানি দিয়েছেন তিনিও মাংস পান এবং যিনি কোরবানি দেননি তিনিও মাংস পান।

আর পঞ্চায়েতে জবাই করা পশুর চামড়াগুলো মাদ্রাসায় দিয়ে দেওয়া হয়। আর চামড়া বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৫০ শতাংশ প্রত্যাবর্তন করে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া পঞ্চায়েতের সদস্য হতে হলে তিনটি পদ্ধতিতে তারা প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করি। যিনি অত্র এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন, বৈবাহিক সূত্রে অথবা যিনি এখানে জায়গা জমি কিনে বাড়িঘর করেছেন। প্রাথমিক যাছাই বাছাই শেষে তাদের পঞ্চায়েত সর্দাররা সিদ্ধান্ত নেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।