শনিবার (২৪ আগস্ট) দুদক’র প্রধান কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (এনআইএস) ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক কর্মকতাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাদের কর্মস্পৃহা আরও বিকশিত হয় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে তারা নতুন উদ্যমে নিজেদেরকে দৃঢ়ভাবে আত্মনিয়োগ করে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কর্মকর্তারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। তাই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রতিরোধে নিবিড়ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
‘এই কাজে স্থানীয় জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য বিভাগ বা সংস্থার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তাদের সহযোগিতা নিয়ে সমন্বিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। কমিশনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। কমিশন নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। সবাই একই ছাতার ছায়ায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিবেন। ’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধ অনুবিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি টাইম-বাউন্ড কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি মনিটরিং ও ইভালুয়েশন করতে হবে। কারণ দুর্নীতি প্রতিরোধ দুদকের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি আইনি ম্যান্ডেট। এর সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার বিষয়টি জড়িত। বর্তমান প্রজন্ম যদি সঠিকভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মননে সুনীতি, চারিত্রিক সততা, নৈতিক মূল্যবোধ গ্রোথিত করতে না পরে, তাহলে আলোকিত প্রজন্ম সৃষ্টি হবে না। যা হবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সীমিত সাধ্যের মধ্যেও প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের মাঝে সততা ও নৈতিক মূল্যবোধ বিকশিত করার লক্ষ্যে বহুমাত্রিক কার্যকক্রম পরিচালনা করছে। উত্তম চর্চার বিকাশে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদেরকে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এ ধরনের উত্তম চর্চামূলক কাজে নিয়োজিত রাখছে।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, অন্ততপক্ষে এই ২৮ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। প্রমাণিত উৎকৃষ্ট অনুশীলনগুলো অনুকরণের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই কমিশন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘সততা স্টোর’ গঠন করছে বলেও উল্লেখ করেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, সমাজে সাইবার ক্রাইমের মতো সাইবার দুর্নীতিও রয়েছে। এ জাতীয় দুর্নীতি দমনে বিচারিক কার্যক্রমে ইলেকট্রনিক রেকর্ডকে সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে সাক্ষ্য আইন-১৮৭২ যুগোপযোগী করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে দুদক। এই আইনটি সংশোধন করা না হলে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে যেসব দুর্নীতি হচ্ছে, সেসব মামলা পরিচালনা করতে কমিশনকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কর্মশালায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, দেশের সরকারি প্রতিটি ওয়েবসাইটে দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রের টোল ফ্রি হটলাইন-১০৬ প্রদর্শিত হচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবও তৈরি করা হচ্ছে।
কর্মশালায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব খন্দকার সাদিয়া আরফিন জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়নে দুদকের করণীয় সম্পর্কে একটি পেপার উপস্থাপন করেন।
কর্মশালায় দুদক সচিব বলেন, শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে দুদক দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ছুটির দিনে আইসিটি বিভাগের সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক কর্মশালা সফল হওয়ায় তিনি তাদেরকে কমিশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
এই কর্মশালায় দুদকের আটটি বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ও ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকরা অংশ নিয়েছেন।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দুদকের প্রতিরোধ অনুবিভাগের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ, প্রশিক্ষণ ও আইসিটি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
এসএমএকে/এসএ