ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে যত্রতত্র সিগারেটের বিজ্ঞাপন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
ফরিদপুরে যত্রতত্র সিগারেটের বিজ্ঞাপন দোকানের সামনে সিগারেটের বিজ্ঞাপন। ছবি: বাংলানিউজ

ফরিদপুর: ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে ফরিদপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকায় যত্রতত্র ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করছে তামাক কোম্পানিগুলোর কর্মীরা। 

পণ্যের বিক্রয় বাড়াতে হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় এমনকি স্কুল-কলেজের পাশেও বসছে কোম্পানিগুলোর এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান। তামাক জাতীয় পণ্য হাতের নাগালে থাকায় ধূমপানে আগ্রহী হয়ে পড়ছে অপ্রাপ্তবয়স্করাও।

প্রকাশ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে ধূমপানের প্রতি আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে প্রজন্মকে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ এর (ক) ধারায় প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা বা করানো যাবে না। (খ) ধারায় তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়ে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে, এর কোনো নমুনা, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে দেওয়া যাবে না এবং (ছ) ধারায় তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যেকোন উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। আইনে ৬ এর (ক) (১)  ধারায় কোনো ব্যক্তি অনধিক আঠারো বৎসর বয়সের ব্যক্তির কাছে তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে পারবে না।

একই আইনে ৫ এর ৪ ধারায় উল্লেখ রয়েছে কোনো ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।

অথচ ফরিদপুরে প্রকাশ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও স্থায়ী দোকানগুলোতে প্যাকেট ও লিফলেট প্রদর্শন করে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করা হলেও তা বন্ধে ভূমিকা রাখছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো।  

ফরিদপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকাসহ উপজেলা পর্যায়ে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন নামি দামি ব্যান্ড্রের প্রচার ও প্রসারের জন্য বসানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র। হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড, স্কুল-কলেজের আশপাশে সুবিধাজনক স্থানকে বেছে নেওয়া হচ্ছে এই কাজে। কোম্পানির নিয়োগ করা কর্মীদের দিয়েই চলছে এই আইনবিরোধী কাজ।  

শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা, গোয়ালচামট জনহাটা এলাকা, রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন স্থান, আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে কোম্পানিগুলোর ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র।  

আর এদিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি। সিগারেটের নাম ও দামসহ ব্যানারে উল্লেখ করা হচ্ছে ‘এখানে ন্যায্যমূল্যে পণ্য (সিগারেট) বিক্রয় করা হয়’। আইন ফাঁকি দিতে সঙ্গে বিক্রি করা হচ্ছে চকলেট।      
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, চাকরির শর্ত অনুযায়ী কোম্পানির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই আমরা এ কাজ করছি।    

ফরিদপুর শহরের প্রায় প্রত্যেকটি মুদি পণ্যের দোকানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সিগারেট। প্রকাশ্যে দোকানের শো-কেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এসব সিগারেটের প্যাকেট। আবার ক্রেতার নজরে আনার জন্য ডামি প্যাকেট দিয়ে তৈরি করা শো-কেস রাখা হয়েছে দোকানের বাইরে উন্মুক্ত ও সহজে চোখে পড়ে এমন স্থানে। লোভনীয় অফারের বিজ্ঞাপনের লিফলেটও ঝুলছে কোথাও কোথাও। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫ এর (ছ) ধারা বিরোধী।

শহরের এসব মুদি পণ্যের দোকানগুলোতে সিগারেট নিতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অপ্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা একেবারে কম নয়। বিশেষ করে অলি-গলির দোকান বা একটু ফাঁকা স্থানের দোকানে এ বয়সী খদ্দেরের ভিড় একটু বেশিই। আবার কোনো কোনো স্থানে অগ্রজদের সামনেই বুক ফুলিয়ে দোকানদারের কাছ থেকে সিগারেট সংগ্রহ করে নিচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্করা।  

শহরের মুজিব সড়কের দোকানি ওয়াহেদুর রহমান জানান, কাস্টমার এসে দোকানে থাকা পণ্য চাইলে তা বিক্রি করাই আমার কাজ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিষেধ করলে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তাই প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেয় তবে ক্রেতা এবং বিক্রেতা সবাই সতর্ক হবে।

আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী।  

তিনি বলেন,  সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রি বন্ধে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করে তুলতে হবে। সেসঙ্গে অভিভাবকদের পারিবারিক শিক্ষা ও সুরক্ষা জোরদার করতে হবে।  

এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস জানিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।

বংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।