চিড়িয়াখানায় আনার পরেই প্রেমে মজেছে প্রাণী দুইটি। তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠায় সুখবর হিসেবে দেখছে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, কদম-শিউলির কোনো রোগ আছে কিনা তা জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এখন প্রাণী দুইটিকে (একসঙ্গে) মনোরম পরিবেশে সি-২১ নম্বর শেডে রাখা হয়েছে। এই শেডটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে অবস্থিত।
এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনও কম। তাই সেখানে চুটিয়ে প্রেম করছে একে অপরে। শিউলিকে চোখের আড়াল হতে দিচ্ছে না কদম।
নতুন অতিথি দেখতে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো। দু’টি প্রাণীকে প্রথমে একটি লোহার খাঁচায় একসঙ্গে রাখা হয়। প্রথম দেখাতে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে খাঁচার মধ্যে একে অপরের কাছে ঘেঁষতে শুরু করে। খাবার দিলে দু’জনে একসঙ্গে খাচ্ছে। সকালে দু’জনে স্বচ্ছ পানিতে সাঁতারও কাটছে। এর আগে চিড়িয়াখানায় ইনব্রিডিং বা অন্তঃপ্রজনন হয়েছে। রক্তের সম্পর্কের জন্য (বাঘ) শাবক হলে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ পরবর্তী প্রজন্ম দিতে পারবে না। তবে, ভিন্ন জাতের (জীবের জিনোম) কদম-শিউলির প্রেম সুখবর হিসেবে দেখছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
এদের (বাঘিনী) শাবক হলে কোনো ঝুঁকি থাকবে না। দ্রুত বংশ বিস্তার করতে পারবে। এক জুটিতেই ভরে যাবে চিড়িয়াখানা।
কদমের বয়স সাড়ে ৩ বছর আর শিউলির বয়স ৩ বছর। শাবক জন্মদানের জন্য শিউলি সক্ষম। তাই এদের একসঙ্গে রাখা হয়েছে।
কদম-শিউলির প্রেম প্রসঙ্গে মিরপুর চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাজমুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, বংশ বিস্তারের জন্য কদম-শিউলির প্রেম জমে উঠছে। উভয়ে শাবক জন্মদানের জন্য যথেষ্ট সক্ষম। প্রেমের বন্ধনে একে অপরকে আলিঙ্গন করছে। আমার দেখামতে চিড়িয়াখানায় ভিন্ন জিনোমের প্রেমের ঘটনা এটাই প্রথম। এদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম ঝুঁকিমুক্ত। রক্তের সম্পর্ক অথবা ইনব্রিডিং হলে শাবকদের ঝুঁকি থাকে বংশ বিস্তার করে না।
তিনি আরও বলেন, ঠিকমতো ব্রিডিং হলে এ জোড়া বাঘই চিড়িয়াখানা ভরিয়ে দিতে যথেষ্ট। এরা কম করে হলেও বছরে ছয়টি শাবক দিয়ে থাকে। দু’বাঘের ‘কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড’ শেষ হয়েছে। বাঘ-বাঘিনী জুটিদের একসঙ্গে রাখা হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে বাঘ প্রতিপালন ও প্রজননের অনুমতি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। সারাবিশ্বে বাঘ রপ্তানি করার জন্য আফ্রিকা সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে বাঘের কৃত্রিম প্রজনন বা বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালনের অনুমোদন বা দক্ষতা কোনোটাই নেই। অথচ বাঘের মাদারল্যান্ড হচ্ছে পাঁচটি দেশ। সেগুলো-বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটান।
তিনি আরও বলেন, চিড়িয়াখানার রয়েল বেঙ্গল টাইগারের নতুন যুগল। পুরুষ ও স্ত্রী টাইগার দু’টির নামকরণ করা হয়েছে ফুলের নামে। দক্ষিণ আফ্রিকার পৃথক দু’টি প্রদেশে তারা জন্মগ্রহণ করেছে ও প্রাপ্ত বয়স্ক। ‘কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড’ অতিক্রম করার পর যুক্ত (Pairing) করা হয়েছে ।
অন্যদিকে ভিন্ন জাতের বাঘ-বাঘিনী টগর ও বেলীকে আলাদা শেডে রাখা হয়েছে। টগরের ডাকে এখনও সাড়া দেয়নি বেলী। খুব দ্রুত সময়ে টগর ও বেলীর প্রেম জমে উঠবে এই অপেক্ষায় সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে চিড়িয়াখানায় মোট ৯টি বাঘ-বাঘিনী রয়েছে। এরমধ্যে নতুন চারটি এবং পুরাতন পাঁচটি। নতুন চারটি বাঘ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৮০ লাখ টাকায় কেনা হয়েছে। চারটি ভিন্ন জাতের বাঘ থেকে নতুন অতিথি আসার সম্ভাবনা দেখছে চিড়িয়াখানা।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
এমআইএস/এএটি