অবশেষে এসব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে এই সময়ে সিলেটে টক অব দ্য সিটি চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন।
তারপরও যেনো কানাঘুষা ব্যবসায়ীদের এই বৃহৎ সংগঠনে দুই পরিবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। বিগত দিনে এ দুই পরিবার থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন সিলেট চেম্বারের। আগামী দিনেও পরিবার তান্ত্রিকতার দাপট থাকছে কি-না? এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে মাতামাতি।
অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রার্থীদের কয়েকজন বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে ভোট ব্যাংক তৈরি করে তারা বার বার বিজয়ী হয়েছেন। এই বাধার প্রাচীর এবার ডিঙাতে চান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের ২২টি পদে নির্বাচন হবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর। চার ক্যাটাগরিতে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে দুই পরিবারের আছেন সাতজন প্রার্থী। বিগত দিনেও এই দুই পরিবারের সদস্যরা ছিলেন নেতৃত্বে।
অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে প্রার্থী ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) পরিচালক ও সিলেট চেম্বারের সদ্য সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ, তার ছেলে খন্দকার ইশরার আহমদ রকি, খন্দকার শিপার আহমদের বেয়াই (রকির শ্বশুর) এহতেশামুল হক চৌধুরী ও ভায়রা ভাই মোহাম্মদ আলী আকিক।
অপর পরিবার থেকে সাবেক সভাপতি ফখর উদ্দিন ১৯৯৭-৯৮ সালে সিলেট চেম্বারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫-১৭ সালে তারই অনুজ সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ দুই মেয়াদ ছিলেন সভাপতির দায়িত্বে। এবার নির্বাচনে তারা প্রার্থী না হলেও তাদের উত্তরসূরী হিসেবে নির্বাচন করছেন তাদের আরেক অনুজ ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, ফখর উদ্দিনের ছেলে ফখর উস সালেহীন নাহিয়ান এবং সালাহ উদ্দিনের শ্যালক সিলেট চেম্বারের সাবেক পরিচালক মুশফিক জায়গিরদার।
যদিও দুই পরিবার থেকে সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ ও খন্দকার শিপার আহমদ সভাপতির দায়িত্বকালীন সময়ে জাল ভোটার করা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। শেষপর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে প্রশাসক নিয়োগের পরও ছিল আইনি জটিলতা। সেই জটিলতার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের সাজ সাজ রব সিলেট চেম্বারে।
সিলেট চেম্বারের নির্বাচনে পরিচালক পদে অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে প্রার্থীদের মধ্যে আরও আছেন, সাহিদুর রহমান, আমিরুজ্জামান চৌধুরী, নুরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান জামিল, শফিকুল ইসলাম, শান্ত দেব, আব্দুস সামাদ, খলিলুর রহমান চৌধুরী, আলিমুল এহসান চৌধুরী, শমসের আহমদ জামিল, আবিদুর রহমান, সমির লাল দেব, ফজলে রাব্বী চৌধুরী, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আবু তাহের শোয়েব, মামুন কিবরিয়া সুমন, এনামুল কুদ্দুস চৌধুরী, মুকির হোসেন চৌধুরী, হুমায়ন আহমদ, ফারুক আহমদ, নজরুল ইসলাম, জুবায়ের রকিব চৌধুরী, আক্তার হোসেন খান, আব্দুল হাদি পাবেল, শহিদ আহমদ চৌধুরী, আব্দুস সালাম, সায়েম আহমদ। এর মধ্যে ফজলে রাব্বি চৌধুরী ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এই ক্যাটাগরিতে একক প্রার্থী হয়েছেন।
এছাড়া অ্যাসোসিয়েট ক্যাপাগরিতে প্রার্থী আছেন ১১ জন। একক একজন। তারা হলেন- মাসুদ আহমদ চৌধুরী, এমদাদ হোসেন, পিন্টু চক্রবর্তী, আব্দুর রহমান, চন্দ সাহা, আতিক হোসেন, আশরাফ আহমদ, ইলিয়াস উদ্দিন লিপু, কাজি মুস্তাফিজুর রহমান, আবুল কালাম ও মনোরঞ্জন চক্রবর্তী সবুজ।
গ্রুপ ক্যাটাগরিতে প্রার্থী হয়েছেন সাতজন। তারা হলেন- জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা গ্রুপ থেকে সিরাজুল ইসলাম, ঠিকাদার ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের মাহবুবুল হাফিজ চৌধুরী, জেলা ট্রান্সপোর্ট মালিক গ্রুপের নুরুল ইসলাম, চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপ থেকে বশির আহমদ, সিলেট এপার্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট (সারেগ) গ্রুপ থেকে তাহমিন আহমদ, ভোগ্যপণ্য পরিবেশক গ্রুপের আমিরুজ্জামান জোয়াহির এবং কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট গ্রুপ থেকে ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী।
সিলেট চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, ২২টি পদে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ৫৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে বাছাইকালে অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে দুই জন এবং অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরিতে একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য তাদের আপিলে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, চার ক্যাটারিতে ভোটার রয়েছেন দুই হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে অর্ডিনারিতে এক হাজার ৪১৩ জন, অ্যাসোসিয়েট এক হাজার ৪০ জন, গ্রুপ ক্যাটাগরিতে ১১ এবং টাউন একটিতে কেবল একজন।
জাল ভোটার বিতর্ক ও আইনি জটিলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয় সিলেট চেম্বারের সদ্য সাবেক পরিচালনা পর্ষদ। পরে মেয়াদোত্তীর্ণ ওই কমিটিকে বাদ দিয়ে গত ৪ জুন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদকে চেম্বারের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ১২০ দিনের মধ্যে তাকে নির্বাচন করার দায়িত্ব দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে উচ্চ আদালতে করা চেম্বারের এক সদস্যের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। গত ১৯ আগস্ট হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালত ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করায় ফের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়।
গত সোমবার (২৬ আগস্ট) উচ্চ আদালতে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে চেম্বারের এক সদস্যের করা আপিল স্থগিত হয়েছে। ফলে তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ সেপ্টেম্বরই অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।
বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
এনইউ/টিএ