বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে দশম জাতীয় সংসদের কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদে ৭৩ শতাংশ আইন পাস হয়েছে ১ থেকে ৩০ মিনিটে।
‘এটা একটা প্রকট সমস্যা। সত্যিকার অর্থে যে জন্য সংসদ-আইন প্রণয়ন, সেই আইন প্রণয়নে সংসদের ভূমিকা বিভিন্নভাবে খর্ব হয়েছে। এমনকি বিলগুলো আইন হিসেবে পাস হওয়ার আগে সংসদ সদস্যরা তা পড়েছেন কিনা, দেখেছেন কিনা- সেটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন না। ’
তিনি বলেন, দশম সংসদে অশ্লীল ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যা খুব বিব্রতকর একটা বিষয়। স্পিকারের প্রত্যাশিত ভূমিকায় ঘাটতি ছিল। সংসদের মৌলিক ভূমিকার জায়গা হচ্ছে জবাবদিহিতা। কিন্তু এটা তুলনা করার মতো নয়। কেননা, বিরোধী দলের দ্বৈত অবস্থান ছিল ওই সংসদে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দশম সংসদ বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। সেই অর্থে বিশ্বে এটি একটি অভূতপূর্ব বিষয়। ১৯৩টি আইন পাস হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীও ছিল। কাজেই আইন প্রণয়নে সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাজেট পাসের ক্ষেত্রেও সংসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে নারী এমপিদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আগ্রহের ঘাটতি ছিল।
গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি বলছে, সংসদের প্রতি কার্যদিবসে গড় উপস্থিতি ছিল ৬৩ শতাংশ। গত সংসদে পুরুষ সদস্যেদের উপস্থিতির হার ৬২ শতাংশ, আর নারীদের ৭১ শতাংশ। ২৩টি অধিবেশনের কোনোটিতেই প্রধান বিরোধী দল বা অন্যান্য বিরোধী দলের সদস্যরা সংসদ বর্জন করেননি। তবে মোট ১৩ বার ওয়াকআউট করেছেন বিরোধী দলগুলোর সদস্যরা।
এছাড়া অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা, নিকটতম সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা, মোবাইল-ট্যাব নিয়ে ব্যস্ত থাকা এবং ঝিমানোর বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
সংসদে স্পিকারের ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদনে টিআইবি বলছে, সংসদ সদস্যদের অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার বন্ধে স্পিকার নীরব ছিলেন। কটূক্তি বা অশ্লীল শব্দের ব্যবহার বন্ধে তিনি সতর্ক করেননি বা এক্সপাঞ্জ করেননি।
প্রতিবেদনে টিআইবির সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, প্রধান একটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি ও প্রতিদ্বিন্দ্বিতামূলক হয়নি। ফলে সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হয় এবং সংসদীয় কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা বৃদ্ধি পায়।
কোরাম সংকট অষ্টম ও নবম তুলনায় কমে যাওয়া, বিল পাসে গড় ব্যয়িত সময় বৃদ্ধি পাওয়া, প্রথম অধিবেশনেই সব কমিটি গঠন ও সরকারি এবং বিরোধী দলের আর্থিক ও অন্যান্য অনিয়ম তুলে ধরার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক লক্ষণীয়।
অন্যদিকে আইন প্রণয়নে আলোচনায় সদস্যদের তুলনামূলক কম অংশগ্রহণ, সংসদীয় কমিটির প্রত্যাশিত কার্যকারিতা ও সংসদীয় উন্মুক্ততার ঘাটতি এবং কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি এবং স্পিকারের জোরালো ভূমিকার ঘাটতির ফলে দশম সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর ছিল না।
এছাড়া সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সংসদ কার্যকর করা সংক্রান্ত অঙ্গীকারসমূহের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ঘাটতি ছিল বলে ওই প্রতিবেদনে জানিয়েছে টিআইবি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে টিআইবি। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া এবং বাজেট ব্যতিত অন্য সব ক্ষেত্রে সদস্যদের নিজ বিবেচনায় ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
সুপারিশ করা হয়েছে-সংসদ সদস্য আচরণ আইন প্রণয়ন করার; যেখানে সংসদ সদস্যরা সংসদের ভেতরে এবং বাইরের আচরণ ও কার্যক্রম সম্পর্কে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসারে নির্দেশনা থাকবে।
এছাড়া সংসদ কার্যক্রম এমন থাকবে, যেখানে সরকারি দলের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার পরিবর্তে কার্যকর বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯/আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা
ইইউডি/জেডএস