ব্রিজ ভাঙা থাকায় স্থানীয়রা নিজেরা চাঁদা তুলে একটি সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এই সড়কের আরও দু’টি ব্রিজের অবস্থাও জরাজীর্ণ।
ডানকান ব্রাদার্সের অধীনস্থ কুলাউড়ার বরমচাল চা বাগান ও রাজনগরের করিমপুর চা বাগানের ভেতর দিয়ে ‘উপজেলা সড়ক’ নামে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৮/০৯ অর্থ বছরে তৎকালীন বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহজাহান সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করলে চলতি বছরে এলজিইডির বাস্তবায়নে সড়কটি নির্মাণ হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজ ভাঙা থাকায় সাঁকো দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে মানুষ। ভারী যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটলেও ছোট ছোট যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ওই সাঁকোর উপর দিয়ে। স্থানীয় জনগোষ্ঠী বেশিরভাগ চা শ্রমিক হওয়ায় ওই সাঁকো নির্মাণের সময় চাঁদা দিতে পারেনি। তাই তারা ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা ব্রিজ দিয়েই চলাচল করছে।
জানা যায়, কুলাউড়া-রাজনগর উপজেলা এলজিইডি’র অধীনে ৮.৮৫ কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়। কুলাউড়া উপজেলা অংশে প্রায় ৫.৮৫ কিলোমিটার এবং রাজনগর উপজেলা অংশে প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়। কুলাউড়া অংশে এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি টাকা এবং রাজনগর অংশে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। মোট খরচ ৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এদিকে কাজ শুরুর আগে সড়কটি ছিল কাঁচা। ব্রিজগুলো ছিল অনেক পুরনো। তবে রাস্তার অবস্থা ভালো না থাকায় আগে ভারী যানবাহন চলাচল কিংবা অতিরিক্ত যান চলাচল করতো না। তাই ওই ব্রিজ দিয়ে অনায়াসে মানুষ যাতায়াত করতে পারতো। কিন্তু সড়কটি পাকা হওয়ার পর কম সময়ে যাতায়াতের জন্য ভারী যানসহ বিভিন্ন শ্রেণির যান সড়কটি ব্যবহার শুরু করে। এতে ওই পুরনো ব্রিজগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় কোনটি ধসে পড়েছে, কোনটির অবস্থা নাজুক।
স্থানীয় খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দা মজনু সুয়ের বাংলানিউজকে বলেন, অনেকদিন ধরে ব্রিজটির অবস্থা জরাজীর্ণ ছিল। তিন মাস আগে পুরোপুরি ধসে পড়ে। রোগী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিপদকালীন সময় চলাচলের জন্য স্থানীয়রা সবাই মিলে ওই বিকল্প সাঁকো নির্মাণ করে।
বরমচাল ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মি বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিজটি বন্ধ হওয়ায় আমরা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন মানুষের চোখে পড়ছে না এই ভাঙা ব্রিজের কারণে। স্থানীয়দের মনে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত ব্রিজটি চালু করে যান চলাচল স্বাভাবিক করা অতীব জরুরি।
বরমচাল সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও কালামিয়া স্টেশন বাজারের সভাপতি ইছহাক চৌধুরী ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, অল্প সময়ে মৌলভীবাজার কিংবা সিলেটে যাতায়াতের মাধ্যমে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার কারণে যাতায়াতের বিঘ্ন ঘটেছে। এতে সাধারণ মানুষের এ ভোগান্তি লাঘবের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাজাহান বলেন, অল্প সময়ে মৌলভীবাজার-সিলেট যাতায়াতের জন্য বরমচাল, ভুকশীমইল ও ভাটেরার মানুষের সুবিধার্থে এ সড়কের প্রস্তাবনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে। স্থানীয়রা ছাড়াও চা বাগানের শ্রমিকেরা অনেক উপকার ভোগ করবে। তবে একটি ব্রিজের জন্য সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে, দ্রুত তা পুননির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কুলাউড়া এলজিইডি প্রকৌশলী ও রাজনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ইসতিয়াক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে ওই ব্রিজটির মাটি টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। ব্রিজসহ রাজনগর অংশের আরও দু’টি জরাজীর্ণ ব্রিজ পুননির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
এনটি