রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) তৃতীয়দিনের মতো এ অভিযান চলছে। অভিযানে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নদী-খাল দখলের কারণে খুলনা মহানগরের জলাবদ্ধতা দুর্বিসহ রূপ ধারণ করেছে। এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা আন্দোলন করেছে পরিবেশবাদীসহ নানা সামাজিক সংগঠন।
জেলা প্রশাসন ও কেসিসির এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় নগরবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে পুনরায় যেন একই স্থাপনা গড়ে না ওঠে সেদিকে সবার খেয়াল রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মহানগরসহ আশপাশের খাল ও নদী বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে দুই পাড় দখল করা হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের সড়ক ও ঘরবাড়ি-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে পানি জমে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক। যে কারণে ময়ূর নদী ও ২৬টি খাল দখলমুক্ত করতে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
জানা যায়, প্রভাবশালীরা স্রোতহীন ময়ূর নদীতে খুব সহজেই পাটা ও বাঁধ দিয়ে প্রতিদিনই দখল কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। পৈত্রিক সম্পত্তির মতো গাছপালা লাগানো ও চাষাবাদসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা, এমনকি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও পাকা বাড়ি-ঘর ভবন নির্মাণ করেছিলেনও অনেকে।
এদিকে এসব অবৈধ স্থাপনাকে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করায় সাধুবাদ জানিয়েছেন নগরবাসীসহ সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
বেসরকারি পরিবেশবাদী সংগঠন কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (সিডিপি) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে খুলনার ময়ূর নদীসহ আশাপাশের ২৬ খালের ওপর পর্যায়ক্রমে শতশত অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যে যার মতো করে স্থাপনা গড়ে তোলে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে শহরের বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষকে। তবে অনেক দেরিতে হলেও প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান বিগত সময়ের সব ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। কেউ কখনও চিন্তাও করেনি এভাবে ৫তলা ভবনও গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন আন্দোলনের চেয়ারম্যান শেখ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বুলডোজার অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ায় স্থানীয় জনতার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও খুশি। একই সঙ্গে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর আগেও তো উচ্ছেদ হয়েছিল, কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। আশা করি, এবার তেমনটি হবে না।
ময়ূর নদীর পার্শ্ববর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্তে আমরা এলাকাবাসী সঙ্গে আছি। তবে মেয়র ও ডিসির কাছে আবেদন জানাই, যেন উচ্ছেদ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ না থাকেন। নদী ও খাল পুনরুদ্ধার কাজটিও যেন দ্রুত শেষ করেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এর আগে ময়ূর নদী ও সংলগ্ন ২৬টি খাল এলাকা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের যৌথ অভিযানে ময়ূর নদী ও ২৬টি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কয়েকটি ভবনের মালিকরা তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে সময় চেয়েছেন। এ কারণে তাদের কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে। দখল-বেদখলে পানি নিষ্কাশনের নদী ও খালগুলো সঙ্কুচিত হওয়ায় পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়। এ কারণে গত ১ সেপ্টেম্বর দখল উচ্ছেদে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রমে গঠিত ৪টি কমিটি ময়ূর নদী ও ২৬টি খালে জরিপ চালিয়ে ৪৬০ জন দখলদারের তালিকা করেছে। নদী ও খাল দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা ৩৮২টি। এর মধ্যে ময়ূর নদে ৭৯ জন ব্যক্তি ৬৩টি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছেন বলে জরিপে উঠে আসে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে খতিয়ান যাচাই-বাছাই করে অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে।
খুলনায় ময়ূর ও ভৈরব নদের তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা কামনা করেছেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় পত্রিকার প্রকাশক, সম্পাদক ও জাতীয় পত্রিকার ব্যুরো প্রধানসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ সহযোগিতা কামনা করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল নদী-খালের অবৈধ উচ্ছেদ কাজের তদারকি করছেন। প্রতি নিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় জেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যতক্ষণ নদী ও খালে অবৈধ দখলদার থাকবে ততক্ষণ উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৯
এমআরএম/ওএইচ/