ঢাকা, রবিবার, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

রোহিঙ্গাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯
রোহিঙ্গাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা ক্যাম্পের ভেতরে একটি বাজার। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বেড়েছে উৎকণ্ঠা। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে সরকারও।

স্থানীয়রা বলছেন, গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে টেকনাফে যুবলীগ নেতা হত্যা ও ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশের বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। পাশাপাশি, এমন অবস্থা চলতে থাকলে নিজেরাই একদিন উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে।

এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

তবে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পগুলোতে যে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বসবাস করছে, সে তুলনায় অপরাধের মাত্রা বেশি নয়। তবে, কিছু কিছু রোহিঙ্গা আছে যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে উখিয়ায় ছয়টি ও টেকনাফে একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় টেকনাফে আরও দু’টি পুলিশ ক্যাম্প বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। এছাড়াও ক্যাম্পগুলোতে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাবের যৌথ টহল জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে বহু সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয়দের উদ্বেগ
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উখিয়া উপজেলার সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, এমন কোনো অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হচ্ছে না। তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের কাছে দিন দিন আমরা অসহায় হয়ে পড়ছি। আমরা আশঙ্কা করছি, ভবিষ্যতে স্থানীয়দেরই ভিটে-বাড়ি ছেড়ে পালাতে হবে।

তিনি বলেন, এখনো সময় আছে, রোহিঙ্গাদের অপরাধের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে না গেলে ভবিষ্যৎ পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, টেকনাফের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ড ও ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সমাবেশ আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এলাকার প্রভাবশালী নেতাকে হত্যা করতে রোহিঙ্গারা দ্বিধাবোধ করেনি। সেখানে, সাধারণ মানুষ তো তাদের কাছে কিছুই না। আমরা সত্যিই উদ্বিগ্ন।

এ জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, ২৫ আগস্ট যে বিশাল সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা, এতে বুঝতে পারি, যেকোনো সময় তারা স্থানীয়দের বিরুদ্ধেও এভাবে রুখে দাঁড়াতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বসবাস করতে পারবে কি-না, তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।

সাহিত্যিক ও পরিবেশবিদ বিশ্বজিত সেন বাঞ্চু বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ড। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ সমস্যার সমাধান হওয়া জরুরি, নাহলে ভবিষ্যতে পুরো জাতিকেই বড় মূল্য দিতে হবে।  

কক্সবাজার জেলা পুলিশের হিসাব মতে, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে অস্ত্র, মানবপাচার, মাদক, অপহরণ, ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ৪৭১টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ২০৮টিই মাদক মামলা। অস্ত্র মামলা রয়েছে ৩৬টি, হত্যা মামলা ৪৩টি, ফরেনার্স অ্যাক্টে ৩৭টি, ডাকাতি নয়টি, পুলিশের ওপর হামলা একটি, অপহরণ ১৫টি, মানবপাচার ২৪টি, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা ৩১টি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২১টিসহ বিভিন্ন অপরাধে আরও ৪৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ রোহিঙ্গাকে।

এসব অপরাধের বিষয়ে মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট। শুধু টেকনাফের যুবলীগ নেতা হত্যাকাণ্ড ছাড়া বাকি সব ঘটনাই তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘঠিত হয়েছে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে মাদক। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আবসার বাংলানিউজকে জানান, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি যাতে ক্রমশ অবনতির দিকে না গড়ায়, সেজন্য সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর সুপারিশমালা পাঠানো হয়েছে। এ সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা গেলে ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

তিনি জানান, সুপারিশে ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন, ক্যাম্প ইনচার্জসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ২৪ ঘণ্টা অবস্থান, ক্যাম্পের ভেতরে গড়ে ওঠা হাটবাজার ও হাজারও দোকান-পাট সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে আনা, রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ টাকা ও নন-ফুড আইটেম বিতরণ বন্ধ করা, রোহিঙ্গাদের চাকরিতে না নেওয়াসহ সুপারিশ আকারে ১৫টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮,  ২০১৯
এইচএডি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।