রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুদ্দিন হুসাইন শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটির রোববার প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও তারা তা জমা দিতে পারেনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (পিবিআই) ইন্সপেক্টর শেখ মোনায়েম হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আসামিদের প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত শুনানি শেষে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আজই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হবে বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা।
এদিকে, পুলিশের এসআই খায়রুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ বিষয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর তদন্তের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত তিন দিন শেষে আজ তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা দেননি।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন শিকদার জানান, ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সুপারের কাছে আরো সাত দিন সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মশিউর রহমানকে যশোর পুলিশ লাইনে বদলি করে নেওয়া হয়েছে। তার স্থলে যোগদান করেছেন ওসি আতাউর রহমান।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরদিন মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গেলে এ ঘটনা জানাজানি হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় ঐ নারীর গণধর্ষিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকার পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত (০৩ই সেপ্টেম্বর) শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামের এক গৃহবধূ স্থানীয় গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ও তার সোর্সের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।
পরে এ ঘটনায় গণধর্ষণের শিকার নারী যাকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দাবি করেছিলেন সেই এসআই খায়রুলকে বাদ দিয়ে শার্শা থানায় মামলা হয়। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ ও একজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এসআই খায়রুল এবং তার সোর্স কামরুজ্জামান, লতিফ ও কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ভিকটিম জানান, শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে দুই সন্তানের জননীর (৩২) বাড়িতে গিয়ে এসআই খায়রুল ও তার সোর্সরা ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিলে ফেনসিডিলের মামলায় জেলহাজতে থাকা তার স্বামীকে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে সহজ জামিনের ব্যবস্থা করবেন তারা। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এবং এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে খায়রুল ও তার সোর্সরা তাকে গণধর্ষণ করে।
গণধর্ষণের পর ভিকটিম ওই গৃহবধূ আরও বলেছিলেন, আমার স্বামী একসময় চোরাচালানিদের পণ্য বহন করতেন। কিন্তু এখন কৃষিকাজ করেন। ২৫ আগস্ট এসআই খায়রুল বাড়ি থেকে আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। পরে এসআই খায়রুল আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় ৫০ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে আমার স্বামীকে চালান দেওয়া হয়। থানা পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়েছি- কিন্তু তারা আমার কথা শোনেননি।
০৪ সেপ্টেম্বর গোড়পাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই খায়রুলের বিরুদ্ধে মামলা না হওয়া প্রসঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন শিকদার বলেন, ভুক্তভোগীর সামনে এসআই খায়রুলকে কয়েক দফা আনা হয়। কিন্তু তিনি খায়রুলকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেননি।
ওই নারীকে কোনো রকম চাপ দেওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, কোনো প্রকার ভয়ভীতি দেখানো হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৬ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৯
এমইউএম/এমএইচএম