সোমবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গৌতম কুমার বিশ্বাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিকেলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় ধর্ষণ মামলাটি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এরআগে, গত শুক্রবার (০৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে পাবনা সদর থানায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে, বিয়ের ঘটনা স্বীকার করলেও থানায় বিয়ে হয়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ।
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ওই গৃহবধূর স্বামী ও তিন সন্তান রয়েছে। তারা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামে থাকেন। গত ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ ও তার চার সহযোগী ওই গৃহবধূকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর অপহরণকারীরা টানা চারদিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। পরে ওই গৃহবধূ কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে এসে স্বজনদের বিষয়টি জানায়। গত ৫ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধূকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তিনি নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই গৃহবধূর বাবা বাংলানিউজকে বলেন, আমার মেয়ে অপহৃত হওয়ার কয়েকদিন পর তাকে খুঁজে পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনে থানায় অভিযোগ দেই। পুলিশ আমাদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে মেয়েকে থানা হেফাজতে রেখে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি থানায় রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামী-সন্তান থাকা অবস্থায় রাসেলের সঙ্গে তাকে কিভাবে বিয়ে দেওয়া সম্ভব তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ঘটনায় আমরা সামাজিকভাবে অপদস্থ হয়েছি। আমরা ধর্ষণের বিচার চাই।
দাপুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য দৌলত আলী বাংলানিউজকে বলেন, গণধর্ষণের অভিযোগে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) একরামুল হক আমার উপস্থিতিতে রাসেলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ সময় ঘন্টু নামে স্থানীয় মাতবর তাকে সহযোগিতা করেন। পরে শুনি ঘন্টুর মধ্যস্থতায় থানায় তাদের বিয়ে হয়েছে। এ বিয়ে কোনোভাবেই শরীয়ত সম্মত নয়।
নির্যাতিত ওই গৃহবধূ বাংলানিউজকে বলেন, রাসেলকে আটক করে আনার পর ওসি স্যার নিজেই থানায় কাজী ডেকে এনে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন। তবে কাজী সাহেব প্রথমে বিয়ে পড়াতে রাজি হননি। পরে ওসি সাহেবের কথামত আগের স্বামীর সঙ্গে তালাক করিয়ে আমাদের বিয়ে পড়ান।
অভিযুক্ত রাসেল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত নই। পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে মামলা ও রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক আমাকে বিয়ে দিয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। থানায় আমাদের বিয়ের সময় উপ-পরিদর্শক (এসআই) একরাম আমাদের ছবিও তোলেন।
বিষয়টি অস্বীকার করে পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ওই গৃহবধূ প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন। ওইদিন রাতে তাদের বিয়ের কথা শুনেছি, তবে থানায় কোনো বিয়ের ঘটনা ঘটেনি। আমার এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার জলি বাংলানিউজকে বলেন, ধর্ষণের বিচার না করে, ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া সামাজিক মিমাংসার নামে প্রহসন। থানায় মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি উভয়ের সম্মতিতেও এই বিয়ে হয়, তবুও তা ধর্ষককে উৎসাহিত করার সামিল। যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে তাহলে এর সঙ্গে জড়িত সবারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯
এনটি