ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়তি আয়ে কমিশন, প্রতিযোগিতার জেরে ঝরলো প্রাণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
বাড়তি আয়ে কমিশন, প্রতিযোগিতার জেরে ঝরলো প্রাণ স্বামী-সন্তানহ ফারহানাজের এ ছবি এখন কেবলই স্মৃতি

ঢাকা: দৈনিক চার হাজার টাকা আয় হলে চালক পেতেন ৭০০ টাকা আর হেলপার ৪০০ টাকা। এর বাইরে প্রতি হাজার আয়ের জন্য তারা ১০০ টাকা করে কমিশন পেতেন। আয়ের টার্গেট পূরণ কিংবা বাড়তি কমিশনের আশায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন ক্যান্টমেন্ট মিনি সার্ভিস পরিবহনের বাস চালক শামীম ছৈয়াল।

একই রুটের অন্য একটি বাস পেছনে আসতে দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন চালক শামীম। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে অপেক্ষারত ফারহানাজ (২৫) নামের এক নারীকে সজোরে ধাক্কা দেয় তার বাস।

এতে ঘটনাস্থলেই ফারহানাজ মারা যান। এসময় ঘটনাস্থলে বাস ফেলে পালিয়ে যান চালক-হেলপার।

গত ৫ আগস্ট সকালে মহাখালী আমতলী এলাকায় ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিস পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো জ-১১-৩০০৩) ওই বাসের ধাক্কায় এক সন্তানের জননী ফারহানাজ নিহত হন। তিনি মহাখালীর রাইসকো ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ঘাতক বাসচালক শামীম ছৈয়ালকে (২০) মহাখালী বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবারো কমিশনভিত্তিক বাস পরিচালনার তথ্য বেরিয়ে আসে। জানা যায়, ভৈরব রুটের অনুমোদন থাকা বাসটি দিনপ্রতি ৫০০ টাকার বিনিময়ে ঢাকার রাস্তায় চলছিলো।

ডিবি জানায়, ফারহানাজকে ধাক্কা দেওয়া বাসটি চালানোর জন্য ঢাকা-ভৈরব রুটের অনুমোদন ছিল। কিন্তু বাসটির মালিক ‘ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের’ ব্যানারে মিরপুর ১৪-বনানী রুটে পরিচালনার জন্য কমিটির সঙ্গে যোগাসাজস করে। এজন্য কমিটিকে দিনপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হতো।

ঘটনার বর্ণনায় ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, বাসটি সারাদিনে চার হাজার টাকা আয় হলে চালক ৭০০ টাকা এবং হেলপার ৪০০ টাকা বেতন পেতেন। কিন্তু চার হাজার টাকার বেশি আয় হলে প্রতি হাজারে তাদেরকে ১০০ টাকা করে কমিশন দেওয়া হতো। বেশি যাত্রী নিলে বেশি টাকা পাওয়া যাবে এমন চিন্তা চালকের মাথায় সবসময়ই কাজ করতো।

ঘটনার সময় মহাখালীতে একই পরিবহনের অন্য একটি বাস পেছনে দেখে আগে যাওয়ার মানসিকতায় দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন শামীম। কারণ আগে গেলে সামনের যাত্রীদের গাড়িতে নিতে পারবেন তিনি। শামীমের গাড়িটি মহাখালী আমতলী ফ্লাইওভারের ঢালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গাজীপুরগামী ভিআইপি ২৭ পরিবহনের একটি বাস বামপাশে সামান্য ফাঁকা রেখে যাত্রী নামানোর জন্য ধীরে ধীরে চলছিলো। শামীম বামপাশের সেই ফাঁকা স্থান দিয়েই গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এ সময় ফুটপাতে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষারত ফারহানাজকে সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর জখম হন। পরে তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ডিবি উত্তরের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার দিন সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য মহাখালী ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে ফারহানাজকে নামিয়ে দেন তার স্বামী নাজমুল হাসান। সেখানে ফারহানাজ রাস্তা পারাপারের জন্য ফুটপাতে অপেক্ষা করছিলেন। তখনই ক্যান্টনমেন্ট মিনি সার্ভিসের একটি বাসের ধাক্কায় ফারহানাজ নিহত হন। এ সময় বাসটির চালক ও হেলপার বাস ফেলে দ্রুত পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নিহতর স্বামী নাজমুল বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ছায়া তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার ঘাতক চালক শামীমকে মহাখালী বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান ডিসি মশিউর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।