ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বন্যায় পরিবার প্রতি ৪ টাকার ত্রাণও মিলেছে: টিআইবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
বন্যায় পরিবার প্রতি ৪ টাকার ত্রাণও মিলেছে: টিআইবি

ঢাকা: ২০১৯ সালের বন্যায় ২৮ উপজেলার মানুষের ক্ষয়ক্ষতি ১৯৮৮ সালের ক্ষতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। তবে এর বিপরীতে যে সরকারি সহায়তা মিলেছে তা যেমন প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল, তেমনি নানামুখী অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে।

দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) করা বন্যা পরবর্তী এক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে।  

রোববার (২৯সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে টিআইবি ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এতে বলা হয়, গত বর্ষা মৌসুমে বন্যায় ত্রাণ বিতরণের তালিকা রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে, পাশাপাশি ছিলো স্বজনপ্রীতি। তবে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

মন্ত্রীর দুর্গত এলাকা পরিদর্শন ব্যয় মেটানো হয়েছে ত্রাণের টাকা থেকে। ত্রাণ পরিবহনের বরাদ্দ না থাকার অযুহাতে তা বিক্রি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

টিআইবি বলছে, সবকিছুর পরও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি ত্রাণ পেয়েছেন ৪ টাকা করে। আর সর্বোচ্চ ত্রাণ যেখানে দেওয়া হয়েছে, সেখানে পেয়েছেন ৭৬ টাকা পরিবার প্রতি।

এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরপ্রতি গড়ে ২০ টাকা থেকে ৭৭২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় যা খুবই সামান্য।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্যায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যাশিত ভূমিকা ছিলো না। স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।  

‘বরাদ্দ কম ও বাজেট ঘাটতি ছিল। এছাড়া প্রশাসনের ভূমিকাতেও ঘাটতি ছিল। ত্রাণ বিতরণে চালের পরিমাণ কম দেওয়া হয়েছে। কাউকে কাউকে দুইবার দেওয়া হয়েছে। ’

তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন, তাদের কাজের অংশ হিসেবেই। তবে কোথাও কোথাও মন্ত্রীর পরিদর্শন ব্যয় মেটানো হয়েছে ত্রাণের বরাদ্দ থেকেই।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের সতর্কতা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ত্রাণের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্য ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য উল্লেখ করে টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বন্যায় প্রতিবছর গড়ে ৩ হাজার ৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির ফলে প্রতিবছর জিডিপি অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৩০ প্রবৃদ্ধি অর্জন থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়েছে।

২০১৯ সালের বন্যায় ২৮ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১০৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আর পানিবন্দি ছিলো প্রায় ৪০ লাখ মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্ত ৩১ শতাংশ খানার ফসলি জমি বালু পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জমিতে বালুর কারণে আগামী ২ থেকে ৩ বছর কাঙ্ক্ষিত ফসল না হওয়ার আশঙ্কাও করা হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।  

টিআইবি বলছে, চলতি বছরের বন্যা মৌসুমে ১৯৮৮ সালের চেয়ে ৩৩ শতাংশ কম পানি প্রবাহিত হলেও এবার ক্ষতির ব্যাপকতা বেশি। এর কারণ হচ্ছে, পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া ও পানি নদীর তীর ছাপিয়ে যাওয়া তীরবর্তী এলাকা তলিয়ে যাওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
ইইউডি/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।