রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরায় এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব ভয়ংকর তথ্য তুলে ধরে বক্তারা বলেন, যথাযথ নদী ব্যবস্থাপনা না থাকায় জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের প্রধান উপজীব্য ধান, মাছ, পশুপালন এবং বসতিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এখন ‘বিপন্ন নদী, বিপন্ন জনজীবন’ উল্লেখ করে গোলটেবিল বৈঠকে বলা হয়, আগামীতে এ অঞ্চলে স্বাভাবিক বসতি থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত জনগণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের এ অঞ্চল বসবাসের অনুপযোগী এমনকি পরিত্যক্তও হতে পারে।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের শহিদ স ম আলাউদ্দিন মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা উত্তরণ, পানি কমিটি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব ও প্রগতির যৌথ উদ্যোগে এ গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
‘জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকার নদী ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এ গোল টেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি আবু আহমেদ।
এতে মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান পানি কমিটি সম্পাদক গবেষক অধ্যাপক হাসেম আলি ফকির।
বৈঠকে জানানো হয়, জেলার সব নদ-নদীতে এখনও রয়েছে হাজার হাজার নেটপাটা। এসব নদীর পাড়েই গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। দখলকৃত নদীর চরে লোনা পানি তুলে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের কারণে এলাকায় পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। কৃষি ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছপালা মরে যাচ্ছে।
নদীর যেখানে সেখানে অপরিকল্পিত স্লুইস গেট স্থাপন করে পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, মরিচ্চাপ নদীর পানি এখন আর কপোতাক্ষে প্রবাহিত হয় না। মানুষ পায়ে হেঁটে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী পার হয়। ইছামতির শাখা নদী কাকশিয়ালি, সাপমারা, লাবণ্যবতীও মরণাপন্ন অবস্থায় চলে গেছে। এসব নদী তীরের মানুষ ভুগছে জলাবদ্ধতার যন্ত্রণায়। তারা হারিয়েছেন তাদের আদি পেশা, কুটির শিল্প, গবাদি পশুপালন ও বনায়ন। তাদের বাড়িঘর বারবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। উৎপাদনহীনতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তার মুখেও পড়ছেন তারা।
গোলটেবিল বৈঠকে বলা হয়, সুন্দরবনের নদ-নদী ভরাট হয়ে আসছে। ফলে অতিমাত্রার বৃষ্টি ও দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা আছড়ে পড়ছে উপকূল ভাগের নদী খাল জনপদে। উপকূলীয় বাঁধ বারবার ভেঙে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে ভাঙন, দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে ঝড়-বন্যা জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে। গত তিন দশক ধরে তারা এসব যন্ত্রণায় ভুগছেন। বক্তারা বলেন, নদী খননই এখন প্রধান কাজ।
তবে, কেবল খনন কাজই যথেষ্ট নয় জানিয়ে তারা বলেন, একইসঙ্গে জোয়ারাধার (টিআরএম) সৃষ্টি করতে না পারলে খনন ফলপ্রসূ হবে না। বেতনা নদীতে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বাস্তবায়ন করে মরিচ্চাপ নদীকে টিআরএমএর উপযোগী করে তোলা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে তারা আশাশুনির বুধহাটায় নোয়াপাড়া বিল অথবা গাবতলা স্লুইস গেট এলাকায় টিআরএম এর সুপারিশ করেন।
সুপারিশে আরও বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলোচ্ছ্বাস রোধে উপকূলীয় বাঁধ আরও উঁচু টেকসই এবং মজবুত করতে হবে।
বেতনা নদীর আশাশুনির বুধহাটা থেকে সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা এবং আশাশুনি সদর থেকে বালিথার ত্রিমোহিনী পর্যন্ত মরিচ্চাপ নদী খননের তাগিদ দিয়ে তারা বলেন, তার আগে নদী পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। তারা আন্তঃনদী খালে সংযোগ স্থাপনের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
জেলার সব নদ নদী পুনরুদ্ধার করে সচল ও স্বাভাবিক করতে পারলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে জানিয়ে তারা বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে একটি স্মারকলিপি পেশ করা হবে। এতে পরিবেশ প্রতিবেশ জীবন জীবিকা রক্ষায় জনগণকে আরও সচেতন হবার আহবান জানানো হয়।
গোল টেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন- উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় পানি কমিটি সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম সফিকুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, প্রগতি পরিচালক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহি, প্রেসক্লাব সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানার্জি, জাসদ নেতা ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সেতু পরিচালক আবুল হোসেন, অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম, প্রকৌশলী আবেদুর রহমান, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন ও গোলাম সরোয়ার, আলি নুর খান বাবুল, মো. নুরুল ইসলাম, আবদুর রব বাবু, শম্পা গোস্বামী, মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
আরএ