সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শেরে বাংলানগরে অর্থমন্ত্রীর দফতরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, প্রকল্পে অপচয় হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পে অপচয় প্রসঙ্গে এমন নম্বর কোথায় পেলেন তারা (বিশ্বব্যাংক) আমি জানি না।
প্রকল্পের অপচয় কমানো প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, নতুন প্রকল্পে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি। নতুন প্রকল্পে কিছুটা বিচ্যুতি হবেই। এটাকে ধরে নিতেই হবে। এটা ইন্দোনেশিয়ায় হয়েছে। এটা মালয়েশিয়ায় হয়েছে। অন্যান্য দেশেও হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে এটা কম হয়। সীমার বাইরে না যায়। প্রধানমন্ত্রীও চেষ্টা করছেন এটা যেন সীমার বাইরে না যায়। আমরা আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি। তখন প্রকল্পে অপচয় কমে আসবে। যতদিন যাবে, ততই আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে। আমাদের দেশীয় ঠিকাদাররাও তাদের কাজে শক্তিশালী হবেন। যেখানে আমাদের সংশয় কাজ করতে পারবো না, সেখানে বিদেশি ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাচ্ছি। আমরা জাইকাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি। বড় বড় চায়না কোম্পানিকে দিয়ে কাজ করাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি যেভাবে দেখছেন আমিও একইভাবে দেখছি। তিনি যা বলেছেন, সত্যি বলেছেন, সঠিক বলেছেন। এটা আমরা সবাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আমরা যে পরিমাণে বিনিয়োগ করছি, সেটা কোয়ালিটিভলি প্রভাইড করতে পারছি না। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে গ্রোথ কমছে। আমরা কিছুটা গ্রোথ কম পাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি বিশ্বাস করি তিনি সফল হবেন, ইনশাল্লাহ! আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। আমরা পাঁচ বছরে যেখানে যেতাম, এখন তিন বছরে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাব।
‘প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সফল হবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চলবো। তিনি যেভাবে গাইডলাইন দেবেন, আমি সেভাবে চলব। সবসময় তার ধারণাগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। তার ধারণার ওপরেই পরিকল্পনামন্ত্রী থাকার সময় প্রকল্পগুলো বাছাই করতাম। আমি মনে করি, সেই একই নিয়মে চলবে। ’
ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ আমাদের শত্রু। প্রধানমন্ত্রীও ক্লাইমেট চেঞ্জকে শত্রু হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জে দায়ী না। আমরা কার্বন নিঃসরণ করি না। ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশ কার্বন নিঃসরণ করে। অথচ ভুক্তভোগী বাংলাদেশ।
প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ হবে আশা। আর আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে যাবে। ইইউ জানতে চেয়েছে, কীভাবে প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে পৌঁছাবে। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এখন স্বাভাবিক নিয়মেই প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে। এছাড়া আমরা এতদিন অনেক বিনিয়োগ করেছি, বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে। অবকাঠামোর একটা ফিজিক্যালি, অন্যটি ননফিজিক্যালি বিনিয়োগ। ননফিজিক্যালি, যেমন শিক্ষাখাতে অনেক বিনিয়োগ করেছি। আমরা মানবসূচক উন্নয়নেও বিনিয়োগ করেছি। এসবের আউটপুট পেতে থাকব। আমরা ফিজিক্যালি, যেমন পদ্মাসেতু প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছি। শুধু পদ্মাসেতু ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেবে। অন্যান্য বিনিয়োগ তো করছিই। এসবের ভিত্তিতে আমি ইইউকে আশ্বস্ত করেছি, প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে পৌঁছাবে। ৮ দশমিক ৩০ থেকে ১০ শতাংশে যাবে প্রবৃদ্ধি।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা বিশ্বাস করেস রোহিঙ্গারা হোমল্যান্ড রাখাইন স্টেটে চলে যাবেন। এ বিষয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে ইইউ। সারাবিশ্বকে এক করে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে ইইউ কাজ করবে।
এনবিআরের ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেফতার, ফলে এটি ঝুঁকিতে আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আজকে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। এতদিন কাজ হলো না কেন? মূল ঠিকাদার চলে গেলে আরও ঠিকাদার আসবেন। একজনের জন্য কখনও পৃথিবী থেমে থাকবে না। বাংলাদেশও থেমে থাকবে না। কেন তিনি গ্রেফতার হলেন, আমি জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
এমআইএস/টিএ