উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. দো এর সঙ্গে ৫০-৫০ পার্টনারশিপে পি-২৪ ও টি-২১ নামে দু’টি অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন সেলিম প্রধান। যা তার মালিকানাধীন প্রধান গ্রুপের ওয়েবসাইটেও স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।
কেউ অনলাইনে ক্যাসিনো খেলতে চাইলে যেকোনো একটি গেমিং সফটওয়্যার মোবাইলে ইনস্টল করতে হতো। এরপর সেসব সফটওয়্যারে প্রবেশ করলে নানা ধরনের গেমস রয়েছে। গেমসগুলোতে পুরোপুরি বাংলায় নির্দেশনা রয়েছে।
ওই গেমসে প্রবেশ করতে গ্রাহককে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ডের প্রয়োজন হয়। নির্ধারিত গেমসের জন্য নির্ধারিত টাকা থাকতে হতো অ্যাকাউন্টে।
খেলা শুরুর পর নির্ধারিত ওই টাকা তিনটি অনলাইন 'গেটওয়ে'তে জমা হতো। গ্রাহক খেলায় জিতলে টাকা অ্যাকাউন্টে ফেরত যেতো, অন্যথায় গেটওয়েতে থেকে যেতো।
এরপর প্রতি সপ্তাহে সেলিম প্রধানের সহকারী আক্তারুজ্জামান সেসব গেটওয়ে থেকে টাকাগুলো তিনটি অ্যাকাউন্টে জমা করতেন। এরপর সেসব টাকা হুন্ডি অথবা ব্যক্তির মাধ্যমে লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হয়ে যেতো।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকেলে সেলিম প্রধানের বাসা ও অফিসে অভিযান শেষে এসব তথ্য জানান র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
তিনি বলেন, র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল ধারাবাহিক তদন্তে জানতে পারে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনা করে আসছে। এর ভিত্তিতে আমরা অপারেশন প্ল্যান করি। এরমধ্যেই খবর পাই, অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা সেলিম প্রধান দেশ ছাড়ছেন।
তৎক্ষণাৎ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী একটি ফ্লাইট থেকে তাকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হই। এরপর সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে আমরা সেলিম প্রধানের বাসা ও অফিসে অবস্থান নেই। পুরো প্রক্রিয়াটিকে পূর্ণ নিরীক্ষা করে আমাদের অভিযান শেষ করতে অনেক সময় লেগেছে।
সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, এ অভিযানে তার বাসা ও অফিস থেকে ৪৮টি বিদেশি মদ, ২৯ লাখ টাকা, ২৩টি দেশের মোট ৭৭ লাখ সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা, ১২টি পাসপোর্ট, ২টি হরিণের চামড়া, ২৩টি ব্যাংকের ৩২টি চেক, ৪টি ল্যাপটপ ও অনলাইন গেমিং পরিচালনার একটি বড় সার্ভার জব্দ করা হয়েছে।
আটক সেলিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে ঢাকায় জন্ম নেওয়া সেলিম ১৯৮৮ সালে ভাইয়ের সহযোগিতায় জাপান চলে যান। এরপর সেখানে গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে জাপান থেকে থাইল্যান্ডে গিয়ে শিপ ব্রেকিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন।
সেখানে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. দো এর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। মি. দো বাংলাদেশে তার মাধ্যমে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসার পরামর্শ দেন। তার ব্যবসায়িক সব নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, মি. দো ও সেলিমের ৫০-৫০ পার্টনারশিপ রয়েছে।
সেলিম গত ১ বছর ধরে অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে মোট কি পরিমাণ অর্থ উপার্জন হয়েছে এবং বিদেশে পাচার করে আসছিল তা তদন্ত সাপেক্ষে জানানোর কথা বলেছেন র্যাব-১ অধিনায়ক।
আটক সেলিম ও তার সহযোগী আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইন, ফরেইন কারেন্সি আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযোগ আনা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৯
পিএম/আরবি/