ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

লালমনিরহাটে রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৯
লালমনিরহাটে রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই

লালমনিরহাট: এবার লালমনিরহাটের নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের বিরুদ্ধে ফারুক মিয়া (২৯) নামে এক রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই দিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (০৬ অক্টোবর) রোগীকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার অপচেষ্টা করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এর আগে রংপুরের পারফেক্ট ক্লিনিকে দ্বিতীয় অপারেশনে গজ বের করে ২০দিন পরে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন রোগী ফারুক মিয়া।

 

রোগী ফারুক মিয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মান্নানের চৌপতি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে। পেশায় স্থানীয় বটতলা মোড় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

রোগী ফারুক মিয়া ও স্থানীয়রা জানান, গত ঈদ উল আজহার দেড় সপ্তাহ পরে পেটে ব্যাথা অনুভব হলে লালমনিরহাট শহরের নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারে ভর্তি হন ব্যবসায়ী ফারুক। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরতরা জানান, এপেন্টিসাইডের অপারেশন করতে হবে। দায়িত্বরত চিকিৎসকদের পরামর্শে ডা. ভোলানাথ বর্ম্মনের তত্ত্ববধানে অপারেশন করে চারদিনে ১৮ হাজার ৫শ টাকা বিল দিয়ে চলে আসেন তিনি।  

কয়েকদিন পর পুনরায় সমস্যা দেখা দেওয়ায় ওই ক্লিনিকের স্বরণাপন্ন হলে তারা ক্ষতস্থান পরিস্কার করে নতুন চিকিৎসাপত্র দেন। কিন্তু এতেও সুস্থ না হয়ে উল্টো শরীরের সমস্যা বেড়ে গেলে ফারুককে তার পরিবার রংপুর শহরের পারফেক্ট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে ডা. সাহেব আলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, পেটে কোনো বস্তু রয়েছে। যা পুনরায় অপারেশন করে বের করতে হবে। সেই চিকিৎসকের পরামর্শে দ্বিতীয় বারের মত অপারেশন করে বের করা হয় গজ-ব্যান্ডেজ। সেখানে ২০দিন চিকিৎসা শেষে প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে কিছুটা সুস্থ হয়ে শুক্রবার বাড়ি ফেরেন ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া।  

এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার (৬ অক্টোবর) সকালে লালমনিরহাট যান ক্ষতিগ্রস্ত রোগী ফারুক মিয়া। বিষয়টি জানতে পেরে নিরাময় ক্লিনিকের মালিক শামছুল আলম রোগী ফারুককে কৌশলে ডেকে নিয়ে দিনভর আপস-রফার চেষ্টা চালান। তাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করলে কৌশলে বেরিয়ে আসেন ফারুক মিয়া।  

ক্ষতিগ্রস্ত রোগী ফারুক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গরীব ও অর্ধশিক্ষিত মানুষ। সুস্থতার জন্য চিকিৎসকরা যা করতে বলেছেন, আমরা তাই করেছি। তারা পেটে ভেতর গজ রেখে সেলাই করেছে সেটা তো আমরা জানতাম না। রংপুরে গেলে দ্বিতীয় অপারেশনে গজ বের করেন ডা. সাহেব আলী। এ নিয়ে সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ দিতে যাওয়ার কথা শুনে নিরাময়ের মালিক ১০ হাজার টাকা দিয়ে আপসের অপচেষ্টা করেছেন। আমি এ অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, সাচিক লালমনিরহাট জেলার শাখার সভাপতি ডা. ভোলানাথ বর্ম্মন এ অপারেশন করেছিলেন। তিনি চিকিৎসকদের নেতা, তার ভুল হতেই পারে না। জামায়াত-বিএনপির চিকিৎসক ডা. সাহেব আলী আমাদের ক্লিনিকের সুনামক্ষুণ্ণ করতে এ অপপ্রচার করছেন। ওই রোগী রোববার নিজেই ক্লিনিকে এসেছিলেন ঠিকই। তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বাংলানিউজকে বলেন, এমন খবর তার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬' ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।