জানা গেছে, দেশের অন্যতম স্থলবন্দর পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক এবং ভারত-ভুটান-নেপালের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ঢাকার পথে যাওয়া-আসায় সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা লালমনিরহাট বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়ক।
কিন্তু ত্রি-দেশীয় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এ স্থলবন্দরে আমদানি রফতানি পণ্য পরিবহনে একশত কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এ মহাসড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে ভোগান্তি এড়াতে বাইপাস সড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। ফলে বাইপাস সড়কগুলোও চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
পুরো জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে চলা এ মহাসড়কটির পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট-১) অংশ চলাচলের জন্য কিছুটা ভালো থাকলেও কালীগঞ্জ-আদিতমারী (লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য সমাজ কল্যান মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিজ এলাকা) অংশটি একেবারে অকেজো হয়ে পড়েছে। খোদ মন্ত্রীর বাড়ির সামনেও হাজারো খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-৩ আসনের অংশটিরও একই অবস্থা। যদিও একই বরাদ্দে গত অর্থ বছরে পুরো মহাসড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। এরপরও আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলার অংশের প্রতি মাসে সংস্কারের নামে জোড়া-তালি দিয়ে যোগাযোগ সচল রেখেছে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এতেই চলছে চব্বিশ থেকে ত্রিশ চাকার অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক।
ট্রাকচালক আমিনুল ও আবদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে গেলেই ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কখনো ট্রাক উল্টে মালপত্র নষ্ট হচ্ছে। জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে এ মহাসড়কে চলতে হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর বাড়ির সামনেও গর্ত। এই মহাসড়কটি দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপুর্ণ একটি সড়ক। খুব প্রয়োজন ছাড়া এ মহাসড়কে গাড়ি চালাই না। মহাসড়কটিকে ‘মরার সড়ক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন গাড়ি চালকরা। মহাসড়কের নিয়মিত যাত্রী নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, একই বরাদ্দে পাটগ্রাম হাতীবান্ধায় সংস্কারকাজ ভালো হলেও আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলা অংশে নামমাত্র কাজ করায় মহাসড়কের এ বেহালদশা। বৃষ্টির সময় কাদা পানি আর শুষ্ক সময়ে ধূলিকণায় পথচলা দায়। মাঝে মাধ্যে বাড়ি এলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নিজেও এই খানাখন্দরের পথে চলাচল করেন। কিন্তু এ মহাসড়ক নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। মহাসড়কটি দ্রুত সংস্কার করতে আমরা ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ বাংলানিউজকে জানান, এ মহাসড়কের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে পাটগ্রামগামী মাত্র ১০ কিলোমিটার অংশে সড়ক প্রস্থস্তকরণ ও সংস্কারকাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া পুরো মহাসড়ক সংস্কার করার মতো কোনো বরাদ্দ নেই।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ বিভাগিয় প্রকৌশলী (এসডিই) বখতিয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, সড়কের পাশে উঁচু মার্কেট ও ভারী যানবাহনে কারণে মহাসড়কটি স্থায়ী হচ্ছে না। গত জুন মাসে মহাসড়কটির পুরো অংশ সংস্কার করায় নতুন করে সংস্কার করার কোনো বরাদ্দ নেই। সওজ-এর নিজস্ব তহবিল থেকে মাঝে মধ্যে গর্তগুলো ভরাট করা হচ্ছে। তবে সেই বরাদ্দও না থাকায় আপাত করা যাচ্ছে না। বরাদ্দের চাহিদা দেওয়া হয়েছে, বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে। তবে এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতিকরণের প্রকল্প হাতে নেওয়ায় শক্তভাবে সংস্কার করার কাজও হাতে নেওয়া যাচ্ছে না। তবে সেই চার লেনের প্রকল্পের কাজ শুরু হতেও তিন-চার বছর সময় লাগবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
এমএমইউ