জেসমিন নাহার (২০) নামে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর পর মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে সালিশ বৈঠকটি হয়। এতে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে ওই নারীর পরিবার ও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
জেসমিন মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নের বাঁশতৈল গ্রামের আব্দুল আজিজ বিশ্বাসের মেয়ে। গত মার্চ মাসে শ্রীপুরের সব্দালপুর ইউনিয়নের সোনাতুন্দি গ্রামের আবু কালাম মোল্যার ছেলে রেন্টু মোল্যার (৩০) সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রেন্টু সম্প্রতি ব্যবসায়িক কাজে দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য জেসমিন ও তার পরিবারকে চাপ দিচ্ছিলেন। যৌতুক দিতে না পারায় সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে জেসমিনকে মারধর করেন রেন্টু। এতে অভিমানে রাতেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জেসমিন।
মঙ্গলবার সকালে জেসমিনের বাবা আব্দুল আজিজ তার মিলন নামে এক প্রতিবেশীকে দিয়ে বাংলানিউজের কাছে মোবাইল ফোনে অভিযোগ করেন, যৌতুকের দাবিতে তার মেয়েকে জামাইসহ পরিবারের লোকজন মারপিট ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এখন তারা বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে রেন্টুর সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন মোল্যা, জেসমিনের হাজরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন, শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীরসহ স্থানীয় মাতব্বররা সালিশ বৈঠকে বসেন। এতে জেসমিনের বাবা আব্দুল আজিজ উপস্থিত হন।
সালিশে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, বৈঠকে জেসমিনের পরিবারকে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ও এসআই জাহাঙ্গীরকে দুই পক্ষ থেকে ১০ করে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনার ‘মীমাংসা’র সিদ্ধান্ত হয়।
যোগাযোগ করলে সব্দালপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার খবির হোসেন সালিশে উল্লিখিত অর্থনৈতিক মীমাংসার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে বিষয়টি অন্যায় হবে।
অভিযোগের বিষয়ে সব্দালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন মোল্যা জানান, তিনি সালিশের এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে আসেন। তবে শুনেছেন ‘সামান্য কিছু লেনদেনের মাধ্যমে’ বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে।
হাজরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বিষয়টি আত্মহত্যা হওয়ায় জেসমিনের পরিবার কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বিয়ের সময় স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য খরচ বাবদ জেসমিনের বাবাকে ছেলেপক্ষ থেকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেসমিনের স্বামী রেন্টু মোল্লা ও শ্বশুর আবু কালামের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
জেসমিনের বাবা যে ফোন নম্বর থেকে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে সকালে অভিযোগ করেছিলেন, ওই নম্বরে ফোন করলে মিলন পরিচয়দাতা ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, পরিবার প্রথমে বিষয়টি হত্যা বলে মনে করলেও পরে ঘটনাটি ‘আত্মহত্যা’ বলে মনে হয়েছে। যে কারণে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলা হয়েছে।
যোগাযোগ করলে শ্রীপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, তারা অনেক চেষ্টা করেও মরদেহের ময়না-তদন্ত করাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তবে সালিশে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বাংলানিউজকে জানান, কোনো অভিযোগ নেই মর্মে জেসমিনের মা-বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়না-তদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
এইচএ/