দেড় বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে একটি দোকান দেন শিবচরের ইমরান খলিফা (২৮)। গত সোমবার রাতে একদল বন্দুকধারী হানা দেয় দোকানে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে বুধবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর বাড়িতে এসে পৌঁছালে বোবা কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েন তিনি। এখন শেষ বারের মতো সন্তানের মরদেহ দেখার প্রতীক্ষায় স্বজনরা।
নিহত ইমরানের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় দেড় বছর আগে মাদারীপুরের শিবচরের দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের মুজাফফরপুর খলিফাকান্দি গ্রামের কৃষক দুদু মিয়া খলিফা জমি বিক্রি করে ও টাকা ধার করে প্রায় ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে একমাত্র ছেলে ইমরানকে দক্ষিণ আফ্রিকা পাঠায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার ওরেঞ্জফার্ম এলাকায় দোকান করতো ইমরান। গত সোমবার রাতে বন্দুকধারী একদল ডাকাত এসে হানা দেয় তার দোকানে। ডাকাতি শেষে দোকান আটকে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ডাকাতেরা। এসময় আব্দুর রহিম নামে শিবচরের আরো এক যুবকও আহত হয়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোরে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে আহত রহিম চিকিৎসাধীন।
ইমরানের মৃত্যুর খবর তার বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারি চলতে থাকে। শোক নেমে আসে পুরো এলাকায়। নিহত ইমরানের মরদেহ সরকার যাতে দ্রুত দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে তার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
নিহত ইমরানের ভগ্নিপতি রুবেল মাতুব্বর জানান, ইমরান বিদেশে যাওয়ার জন্য অনেক টাকা দেনা হয়েছে। সে গত দেড় বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছে। এখনো প্রায় ৫-৭ লাখ টাকা দেনা রয়েছে। তার স্বপ্ন ছিল দেশের দেনা পরিশোধ করে ছোট বোনদের বিয়ে দেবে। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। এখন সরকার যদি মরদেহটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয় ও একটু সহযোগিতা করে, তাহলে হয়তো পরিবারটি বেঁচে থাকার ভরসা পাবে।
নিহত ইমরানের বোন রোজিনা বেগম বলেন, আমাদের চার বোনের একমাত্র ভাই ছিল ইমরান। আমরা ধার দেনা করে আদরের ভাইটারে বিদেশ পাঠাইছিলাম। ডাকাতরা ওরে বাঁচতে দিল না। এখন আমাদের পরিবারের কী হবে। কীভাবে ধার শোধ করবো।
নিহত ইমরানের বাবা দুদু মিয়া খলিফা বলেন, আমার একমাত্র ছেলেরে ডাকাতরা মাইরা ফালাইছে। ওর মুখটা শেষবারের মতো দেখতে চাই। ওর মরদেহ তাড়াতাড়ি যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয় সরকারের কাছে এটাই আমার দাবি।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টা দুঃখজনক। নিহতের পরিবার আমাদের কাছে আবেদন করলে মরদেহটি যাতে দেশে আসে আমরা সেই ব্যবস্থা করবো এবং পরিবারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৯
এসএইচ