এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা মুখ না খুললেও বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এজন্য ক্ষমতাসীন দল ও এর বাইরে হঠাৎ অনিয়ম করে ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যাওয়া ব্যক্তিদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ওপর মহলের নির্দেশে অবৈধ টাকার মালিক বনে যাওয়া ব্যক্তিদের পৃথক তালিকা হয়েছে। যারা অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে ‘মাল্টি-মিলিয়নিয়ার’ হয়েছেন, তাদের সে তালিকায় উঠে এসেছে ৮৪ জনের নাম। যাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সারির নেতা ও জনপ্রতিনিধি। এ তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের কয়েকজনের নামও যুক্ত রয়েছে বলে জানায় সূত্র।
ওই সূত্র জানায়, ৮৪ জনের তালিকাটি একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে! তালিকাভুক্তদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিগগির শুরু হতে পারে অভিযান। কেবল ক্যাসিনো বা ক্লাবকেন্দ্রিক জুয়ার বোর্ডে সীমাবদ্ধ থাকবে না এ অভিযান। অনিয়ম-দুর্নীতিও অভিযানের আওতায় আসবে।
কাদের নাম আছেন ওই তালিকায়- এ নিয়ে সিলেটজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
একাধিক সূত্র মতে যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদেরও কয়েকজন আছেন এই তালিকায়, যারা সিলেটে চলমান বিভিন্ন ক্লাব হাউসের ‘প্রাণপুরুষ’।
সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে জমা হয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অভিযুক্তদের কেউ ক্রীড়াঙ্গনে ‘ভর’ করে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। ‘পাতি নেতা’ থেকে ঠিকাদারির মাধ্যমে অনিয়ম করে কেউ রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি। হয়েছেন হাওররক্ষা বাঁধের বড়মাপের দুর্নীতি মামলার আসামিও। কারও কারও বিরুদ্ধে বাসা-বাড়ি, জমি-জমা জবর দখলেরও অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ধরনের অভিযোগ থেকে মুক্ত নন জনপ্রতিনিধিরাও। শোনা যাচ্ছে, তাদের কয়েকজনের নামও আছে তালিকায়।
কেবল নগর নয়, উপজেলা পর্যায়ে পাথর রাজ্যের খাস খতিয়ানের সম্পত্তি চষে খাওয়া নেতাদের ওপর নিজেদের হক জাহির করে যারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার ভাগ নিয়েছেন এবং তৃণমূলের সেসব রথিরা ক্ষমতার দাপটে মহারথি হয়েছেন, তাদের নামও তালিকায় রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
সিলেটের তিন উপজেলা কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের জাফলং, কানাইঘাটের লোভাছড়ার ‘কাঁচা টাকার’ ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের দিয়ে খুনাখুনি যারা করিয়েছেন সেসব নেতাদের নামও তালিকায় রয়েছে বলে জানাচ্ছে সূত্র।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সারকারখানা নির্মাণলগ্নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ও মালামাল ব্যবহার করায় কিছুদিন পরপর কারখানাটি বন্ধ হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া সার পরিবহনে একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণেও ক্ষতির সম্মুখীন কারখানাটি। এসব অনিয়ম ওপর মহলের চোখ এড়ায়নি। আর এতে জড়িতদের নামও তালিকায় উঠেছে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
সূত্রের তথ্য, সিলেটের যে গুটিকয় ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে, তাদেরও চিন্তায় পড়তে হচ্ছে তালিকা নিয়ে। এদের নামও রয়েছে তালিকায়।
সম্প্রতি সিলেট সফরে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া এক বক্তব্য ‘হাইব্রিড নেতাদের’ ভয় পাইয়ে দিয়েছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে গেছেন, সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন, কুতুবদিয়া থেকে তেঁতুলিয়া দলের ভেতর শুদ্ধি অভিযান চালানো চলবে। এ ঘোষণার পর কেবল নির্দেশনার অপেক্ষায় প্রশাসন। দলের ঝাণ্ডা হাতে নিয়ে যে দুর্নীতিবাজ নেতারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তারাও এখন অভিযানের ভয়ে তটস্থ। গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন নিজেদের। অনেকে অবৈধ আয়ে উপার্জিত টাকা গোপনে সরিয়ে নিচ্ছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, সিলেটে এখনো ক্যাসিনোর সন্ধান না মিললেও এলিট শ্রেণীর দু’টি ক্লাব আছে। আছে ক্রীড়াঙ্গনকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি ক্লাব। রয়েছে প্রচুর জুয়ার বোর্ড। সেসব বোর্ডে জুয়াড়িদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এ যাবত র্যাব-পুলিশের অভিযানে নগরের ৬ থানা এলাকার সাড়ে ৬ শতাধিক জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটে ক্যাসিনো ও ক্লাব নেই। আছে কেবল জুয়ার আসর। সেসব আসর ভাঙতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি অনিয়মে জড়িত রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিও পুলিশ তথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরদারি রয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) জেদান আল মুছা বাংলানিউজকে বলেন, মাদক, জুয়া এবং অন্যান্য অপরাধের বিষয়ে পুলিশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৯
এনইউ/এইচএ/