মদনের কাইটাল ইউনিয়নের কেশজানি গ্রামে তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। নারী-পুরুষ এমনকি শিশুদের সহযোগিতায় সংগ্রহকৃত এসব পুঁটি তাৎক্ষণিক কেটে আঁশ ছাড়িয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে শুঁটকির জন্য।
এক দল শ্রমিক পুঁটি মাছ কাটছেন অপর দল তা ধুয়ে পানি ঝরাচ্ছেন, এরপর লবণ মাখিয়ে পানি ঝরিয়ে মাচায় দেওয়া হচ্ছে শুকানোর জন্য। সম্পূর্ণ শুকানোর পরেই তৈরি হবে শুঁটকি।
রোদ থাকলে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে শুঁটকি তৈরি করতে সময় লাগে ৪-৫ দিন। এক মণ শুঁটকি তৈরি করতে প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকবলের প্রয়োজন হয়। তারা প্রত্যেকে ভোর ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করেন।
শুধু মাছের তেল সংগ্রহ করতেই মাছ কেটে দেন নারী শ্রমিকরা। পরে তাদের সংগ্রহকৃত মাছের তেল ১০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি করা হয়। সেই তেল চ্যাপা তৈরির জন্য ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় চ্যাপা তৈরির ক্ষেত্রে ওই মাছের তেলই ব্যবহার করা হয়।
এই শুঁটকি তৈরির কাজে একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পারিশ্রমিকে কাজ করেন।
রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় নেত্রকোনায় তৈরি পুঁটি শুঁটকি।
একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১৫ থেকে ২০ মণ শুঁটকি পাঠানো বা বিক্রি করা সম্ভব হয়। মাছের আকার ভেদে ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এসব শুঁটকি।
শুঁটকি তৈরিকারী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম খান। তিনি কাইটাল ইউনিয়ন কেশজানি গ্রামের মৃত মোতালেব খানের ছেলে। লাভ-ক্ষতির হিসেব না কষে তিনি এ পেশায় আছেন প্রায় এক যুগ ধরে।
তার মতো একই পেশায় জড়িত আছেন একই গ্রামের বাসিন্দা আবেদ আলী, নিজাম উদ্দিন, আহাদ মিয়া ও মোবারক।
তাদের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে যারা স্বচ্ছল তারা এককভাবে ব্যবসা করলেও তুলনামূলক দুর্বল ব্যবসায়ীরা কয়েকজন মিলে শুঁটকি মাছ তৈরির ব্যবসা পরিচালনা করেন।
শুঁটকি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, দিন যত বাড়ছে দূর-দূরান্তের বিভিন্ন জেলায় ততই বাড়ছে নেত্রকোনার পুঁটি শুঁটকির কদর। চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
শুঁটকির ব্যবসায় এ পর্যন্ত ১৫-২০ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়েছেন তিনি। অতীতের হিসেব মতে এতে বছর শেষে বা ছয় মাস পরে ২/৪ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হয়।
জেলেদের কাছ থেকে সরাসরি প্রতি কেজি তাজা পুঁটি মাছ ১৫০-২২০ টাকা দরে কিনতে হয়। বড় আকারের মাছের দাম একটু বেশি নেন জেলেরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৯
আরএ