ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্যাতনের শিকার সুমিকে ফিরে পেতে মায়ের আকুতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৯
নির্যাতনের শিকার সুমিকে ফিরে পেতে মায়ের আকুতি

পঞ্চগড়: সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদী আরব গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তারকে ফিরে পেতে চান তার মা মলিকা বেগম। 

মেয়ের নির্যাতনের কথা শুনতে পেয়েছেন একমাস আগে, মোবাইল ফোনে সুমির সঙ্গে কথা হয় তার। এরপর থেকেই মেয়ের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে মায়ের।

 

সুমির বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতী সেনপাড়া গ্রামে। সুমির বাবা রফিকুল ইসলাম, পেশায় একজন দিনমজুর। চার-ভাই বোনের মধ্যে সুমি বড়।

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তার।  সোমবার (০৪ নভেম্বর) সুমির বাড়িতে দেখা যায় কথা হয় তার মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমির মা মলিকা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় এক মাস আগে মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা হয়েছে। তার ওপর নাকি অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে, এমনকি চোখে আঘাত করার কারণে এখন দেখতেও সমস্যা হচ্ছে তার।

‘যখন সুমির সঙ্গে কথা হয়েছিল তখন সে জানিয়েছিল, দুইতলার উপরের সিঁড়ি থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেসময় অনেক ব্যথা পায়। ’ 

তিনি জানান, মেয়েকে ফিরে পেতে গরু বিক্রি করে জামাইকে টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু এখনও আমার মেয়েকে কেউ এনে দিতে পারেনি। আমি আমার মেয়েকে ফিরে পেতে সরকারে কাছে আকুতি জানাচ্ছি।  

জানা যায়, অভাব অনটনের কারণে কয়েক বছর আগে সুমিকে নিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসে তার পরিবার। সেখানে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ নেন সুমি ও তার মা মলিকা বেগম।  

দুইবছর আগে আশুলিয়ার চারাবাগের নূরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমির। পরে অসুস্থ হওয়ায় বাড়িতে চলে আসেন মলিকা।  

এরই মধ্যে দালালদের দেখানো লোভ আর বিনামূল্যে বিদেশে যাওয়ার প্রলোভনে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি সুমি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর প্রশিক্ষণ শেষে গত ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান যান সুমি।

সেখানে যাওয়ার পরই শুরু হয় তার ওপর পাশবিক নির্যাতন। এমনকি বাড়িতেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না তাকে।  

মেয়ের ছবি হাতে মা, পাশে সুমির ভাই-বোনেরা।  ছবি: বাংলানিউজসুমির প্রতিবেশী সামসুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কয়েকদিন আগে সুমির বাবা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, তার মেয়ে নাকি কাজের জন্য সৌদিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সে দেশে আসতে চাইলেও তাকে আসতে দিচ্ছে না। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যেন শিগগির দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।  

আরও পড়ুন>>

** সৌদি থেকে ফিরতে চান নির্যাতিত সুমি
** বাংলানিউজের খবরে সুমিকে ফেরানোর নির্দেশ প্রতিমন্ত্রীর
** সুমির সঙ্গে কথা হয়েছে, উদ্ধারের চেষ্টাও চলছে

এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সুমিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে পাঁচপীর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। এখন যেহেতু জানলাম তাই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তার পরিবারকে দেওয়া হবে।

গত রোববার (০৩ নভেম্বর) বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ‘সৌদি থেকে ফিরতে চান নির্যাতিতা সুমিশিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি দেখার পর ওইদিনই সুমি আক্তারকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।  

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও সুমির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৯
আরএ/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।