মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে শিশুটিকে ভবনের একটি দেয়ালের নিচে চাপাপড়া অবস্থায় সন্ধান পাওয়া যায়। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
শিশুটি মূলত পুরো ভবন ধসের নিচে চাপা পড়ে ছিল। নিচে নোংরা কাদাপানি থাকায় সেখানে উদ্ধার অভিযানে একাধিকবার নামতে গিয়েও নামতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। অনেকবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পানি দিয়ে এই কাদা দূর করে তল্লাশি চালানোর কথা বলা হলেও তা করা হয়নি।
নিহত ওয়াজিদ ধসে যাওয়া বাড়িটি কাছাকাছিই থাকতো। তার বাবার নাম আব্দুল রুবেল ও মায়ের নাম কাকলী বেগম। সে একই এলাকার ব্যাপারীপাড়ার সানরাইজ স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
রোববার (০৩ নভেম্বর) বিকেলে মুন্সীবাড়ি এলাকার এইচ এম ম্যানশন ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির মালিক মৃত আব্দুর রউফ মিয়ার চার সন্তান।
ফায়ার সার্ভিসে অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মন্ডলপাড়া স্টেশনের স্টেশন অফিসার বেলাল জানান, আমরা উদ্ধার অভিযানের এক পর্যায়ে দেয়াল ভাঙতে ভাঙতে শেষ পর্যায়ে নিচের দিকের দেয়ালের নিচে চাপাপড়া ওয়াজিদের পায়ের সন্ধান পাই। তখন তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হয়। তবে অনেক চেষ্টা করলেও তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, হয়তো সে বের হতে গিয়ে দেয়ালের নিচে চাপা পড়েছিল। যে কারণে আমরা ভবনের ভেতরে দেয়াল কেটে আসবাবপত্র সরিয়েও তার সন্ধান পাচ্ছিলাম না। নিচের কাদাপানির কারণে পানির নিচে নেমেও অনুসন্ধানে অনেক বেগ পেতে হয়, নামাটাও হয়ে পড়ে কঠিন।
ওয়াজিদের বাবা রুবেল জানান, তার সন্তান ভবনটির নিচতলায় সোনিয়া নামে এক মহিলা আরবি পড়ান, তার এখানে আরবি পড়তে এসে ভেতরে আটকে পড়েছিল। প্রথম থেকেই ফায়ার সার্ভিসকে আমরা বলেছি যেন ভেতরে অক্সিজেন দেন, নিচে চাপা পড়েছে কিনা দেখেন। আমার সন্তান এখানেই আছে তারা আমাদের কথা শোনেনি। আজকে দুদিন পর আমার সন্তানকে তারা মৃত উদ্ধার করলো।
ওয়াজিদের মা কাকলী বেগম ছেলের মৃত্যুর সংবাদে বারবার মূর্ছা যেতে যেতে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের একদল যায় আরেকদল আসে। আমরা অনেক বলেছি ভেতরে আমার ছেলে আছে কিন্তু শোনেনি, বলে কাজ চলছে। আমার ছেলেরে আমি নিজে এগিয়ে এসে দিয়ে গেছি পড়তে। ফায়ার সার্ভিসের জন্যই আমার ছেলেকে জীবিত উদ্ধার করা গেলো না।
স্থানীয় যুবক রমজান আলী জানান, আমরা সোমবার ঝগড়া করেছিলাম ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের সঙ্গে তাদের কাজের ধীরগতি দেখে। আমরা বলেছিলাম তারা না পারলে এলাকাবাসীর কাছে দিক, আমরাই উদ্ধার করি। তারা সেটি করেনি। আজকে দেয়ালের নিচ থেকে শিশুটির মরদেহ পাওয়া গেলো, হয়তো এই চেষ্টা আগে করলে শিশুটিকে জীবিতও উদ্ধার করা যেত। আমরা বলেছিলাম পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করে পানি দেন একমুখী তাহলে কাদা পরিষ্কার হবে, সেটিও করেনি তারা। এখন করছে।
স্থানীয়রা জানান, ভবনটি মূলত একটি ডোবার উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। সেখানকার লোকজনও এ ব্যাপারে অনেকবার ভবন মালিককে নিষেধ করেছিলেন। ভবনটি কোনো সয়েল টেস্ট কিংবা রাজউকের অনুমতি ও পাইলিং ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছিল। ছিল না কোনো ফাউন্ডেশনও। ভবনটি তিনতলা পর্যন্ত করার পরও ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি চারতলার ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়। আর এ লোড নিতে না পেরেই রোববার ধসে পড়ে ভবনটি।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন জানান, একটি দেয়ালের নিচে চাপা পড়েছিল শিশুটি। এ কারণে আমরা তার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারিনি। উদ্ধার অভিযানের এক পর্যায়ে আজ দুপুর ২টায় তার সন্ধান পাওয়া যায়। ততক্ষণে শিশুটি আর জীবিত নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৯
জেডএস