ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্নীতির বলয়ে হবিগঞ্জের মৎস্য কর্মকর্তা আলম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
দুর্নীতির বলয়ে হবিগঞ্জের মৎস্য কর্মকর্তা আলম

হবিগঞ্জ: টানা ১০ বছর একই এলাকায় কর্মরত থেকে দুর্নীতির বলয় গড়ে তুলেছেন নবীগঞ্জের কুর্শি কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম। পুকুর খনন, আসবাবপত্র ও মাছের ওষুধ ক্রয়ের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আলমের বিরুদ্ধে। 

দীর্ঘদিন ধরে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে নিম্নমানের বেসরকারি হ্যাচারি থেকে রেণু সংগ্রহ, বিনা টেন্ডারে সরকারি গাছ বিক্রি, প্রশিক্ষণের নাম করে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে এই দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

সহকর্মীদের কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই কপালে জুটে বদলী অথবা নানারকম হয়রানি।
 
এছাড়াও বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জ সদর ও বানিয়াচং উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে আজমিরীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে প্রশিক্ষণের নাম করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।
 
জানা যায়, ২০১০ সালে নবীগঞ্জে কার্প হ্যাচারি কমপ্লেক্সে যোগ দেন মোহাম্মদ আলম। প্রায় ১০ বছর ধরে একই জায়গায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সেই সুবাদে গড়ে উঠেছে তার দুর্নীতির নিজস্ব বলয়। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে চলছে তার দুর্নীতির রাজত্ব। তার ডানহাত হিসেবে কাজ করছেন বানিয়াচং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের ক্ষেত্র সহকারী হাবিবুর রহমান।  
 
জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেওয়া তথ্য মতে, আলম একাধিক অর্থবছরে পুকুর ভরাটের নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আল আমিনের সহযোগিতায় পুকুর খননের নাম করে আত্মসাৎ করেন ৩৮ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্পের ৩ লাখ টাকার পুরোটাই চলে যায় তার পকেটে। গত দুই বছরে প্রায় ১২টি উপজেলায় সরকারি পোনা সরবরাহ করলেও নামমাত্র টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে পুরোটাই হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
 
এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বিনা টেন্ডারে ৬টি বিশাল আকৃতির গাছ বিক্রি করে দেন হ্যাচারি কর্মকর্তা আলম। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১০ লাখ টাকা হবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী। এছাড়া সরকারি বিধি মোতাবেক বেতন থেকে কোয়ার্টারের ভাড়া কর্তনের কথা থাকলেও তিনি তা করছেন না। সরকারি কোয়ার্টারে থেকেও কাগজপত্রে তা দেখানো হচ্ছে না।
 
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে বানিয়াচং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে আলমকে পাওয়া যায়নি। সেখানে কর্মরত ক্ষেত্র সহকারী হাবিবুর রহমান জানান, গত অর্থবছরে চাষিদের অংশগ্রহণে ৩০টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ তালিকা থাকার কথা থাকলেও অফিসে একটি প্রশিক্ষণেরও তালিকা নেই। অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষণের টাকা রফাদফা করতে কর্মকর্তা আলমের ডান হাত হিসেবে কাজ করছেন ক্ষেত্র সহকারী হাবিবুর রহমান।
 
একইদিন নবীগঞ্জের কুর্শি কার্প হ্যাচরিতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানে দেখা যায়, ৬টি গাছ কাটা হয়েছে। যার মোথাগুলো লতাপাতা দিয়ে ডাকা। এছাড়াও বিভিন্ন সময় পুকুর খননের প্রকল্প গ্রহণ করলেও খননের আলামত সেখানে দেখা যায়নি। হ্যাচারির বিশাল জায়গাজুড়ে সবজির বাগান রয়েছে। যা ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় এক কৃষককে লিজ দিয়েছেন মোহাম্মদ আলম।
 
এ ব্যাপারে হ্যাচারীতে উপস্থিত ওবায়দুল হাসান নামে এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আলম সাহেব না এলে কোনো কথা বলা যাবে না। তবে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
 
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হবিগঞ্জের উপ পরিচালক কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এনিয়ে তদন্ত চলছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের মোবাইলে বার বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সবশেষ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে তিনি বলেন, আমি মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকারি সফরে চীন থাকায় ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ আলম।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
এমআরএ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।