ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাদশার অবস্থান, উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পেল গাঙ্গপাড়াবাসী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
বাদশার অবস্থান, উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পেল গাঙ্গপাড়াবাসী ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার অবস্থানের পর তীব্র শীতের মধ্যে উচ্ছেদের হাত থেকে সাময়িকভাবে রক্ষা পেল গাঙ্গপাড়াবাসী। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) আবারও মহানগরীর পবা নতুনপাড়া এলাকার গাঙ্গপাড়া খালের দুই পাশের বাড়ি-ঘর ও স্থাপনা উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন তিনি।

এই দাবিতে ফজলে হোসেন বাদশা রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এছাড়া উচ্ছেদের আগে মানবিক কারণে এলাকার অধিবাসীদের সময় দেওয়ার কথা বলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাদশা।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ তাদের উচ্ছেদের দিন ছিল।

অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে সংসদ  সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, শীতের এই তীব্রতার মধ্যে ঘরবাড়ি সরাতে তিনদিন সময় বেঁধে দেওয়াটা অন্যায়। তারা এই শীতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন? এই কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে তাদেরকে সময় দেওয়া উচিত।

তাছাড়া এটিও দেখা দরকার যে, ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা কতটুকু। তারা যে সার্ভে করবে সেটা নির্ভুল হতে হবে, নিরপেক্ষ হতে হবে। আমরা এখানকার জনপ্রতিনিধি, অথচ সেই হিসেবেও এই বিষয়টি আমাদেরকে অবগত করা হয়নি। সরকারি যে কোনো উন্নয়নে আমরা সহযোগিতা করি এবং আগেও করেছি।

তিনি আরও বলেন, এখানে তারা নিজেরা একটা সার্ভে করেছে, সেটা ত্রুটিপূর্ণ। এবং সেই ত্রুটিপূর্ণ সার্ভে দ্বারা এখানে হাজার হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এই তীব্র শীতে বাড়ি-ঘর ছাড়া করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে অবশ্যই পুনর্বাসন করে এখান থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।

এ সময় ফজলে বাদশা অভিযোগ করে বলেন, শনিবার (২১ ডিসেম্বর) তার সুপারিশ করা স্মারকলিপি রাজশাহী জেলা প্রশাসককে দেওয়া হয়েছে। সেটি পেয়েছেন কিনা তাও তিনি জানেন না। তার ফোন জেলা প্রশাসক ধরেননি। এমন জেলা প্রশাসক তিনি তার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দেখেননি বলেও জানান।

এদিকে, রোববার গাঙ্গপাড়ায় অবস্থানকালে মোবাইলে হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদশা। তিনি বলেন, এখানে অবস্থানকালে তাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘আপনার বিপদ আছে। ’ বাদশা বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছি, থাকবো। কারও হুমকিতে কিছু যায় আসে না। তিনি নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন বলে জানান।

মহানগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম বলেন, গাঙ্গপাড়ার ওই খালপাড়ে স্বাধীনতার আগে থেকে প্রায় ২৫০টি পরিবার বসবাস করছে। প্রতিটি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর রয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগও রয়েছে। প্রায় তিন হাজার মানুষের মধ্যে ৫০ এর বেশি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছে।

এর আগে রোববারের আগে স্থাপনা নিজ দায়িত্বে নিয়ে সরিয়ে নিতে মাইকিং করে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে এই মাইকিং করা হয়। পরে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে পুলিশ গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে অধিবাসীদের সরে যেতে বলে। এতে বাসিন্দারা ভয় পেয়ে শনিবার সকালের দিকে কেউ কেউ বাড়িঘর ভাঙা শুরু করে দেয়। কেউ কেউ অন্যত্র বাসা ভাড়া খুঁজতেও যায়। এছাড়া শুক্রবার মানববন্ধনও করে অধিবাসীরা।

পরে শনিবার সকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর কার্যালয়ে গিয়ে গাঙ্গপাড়া এলাকার বাসিন্দারা সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে বিষয়টি অবহিত করে এই শীতে তাদের ঘরবাড়ি রক্ষার অনুরোধ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বরাবর লেখা এলাকাবাসীর সময় বাড়ানো ও পুনর্বাসনের একটি আবেদনপত্রে এ ব্যাপারে সুপারিশ করেন সংসদ সদস্য ফজলের হোসেন বাদশা।

পরে শনিবার রাতে তিনি গাঙ্গপাড়া এলাকা পরিদর্শনও করেন। এ সময় তাকে ঘিরে ধরেন এলাকার সহস্রাধিক বাসিন্দা। তারা এই শীতে তাদের ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. কহিনুর আলম বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় সরকারি নিয়ম মোতাবেক খাল খনন করা হবে। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তাদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। এটা চলবে বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
এসএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।