ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুষ না দেওয়ায় শিক্ষকের বেতন বন্ধ করলেন প্রধান শিক্ষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
ঘুষ না দেওয়ায় শিক্ষকের বেতন বন্ধ করলেন প্রধান শিক্ষক

লালমনিরহাট: ঋণ করে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় এক সহকারী শিক্ষকের বেতন বন্ধ ও বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়া অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার দুলালী গ্রামের ভূমিহীন মাইনুল ইসলাম দিনমজুরির আয়ে ছেলে মনোয়ারুল ইসলামকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে স্নাতকোত্তর পাস করান। এরপর আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (গণিত) পদে নিয়োগ পান মনোয়ারুল ইসলাম।

 

নিয়োগকালীন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম কাজল ৮ লাখ টাকা দাবি করলে তার গরিব ভূমিহীন বাবা ছেলের চাকরির জন্য একসঙ্গে এতো টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন। ফলে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা হারে কিস্তিতে সমুদয় টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে চাকরি হয় মনোয়ারুল ইসলামের। তবে যোগদানের সময় দুইটি সাদা কাগজে ও ৬টি চেকে সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুলের স্বাক্ষর করে নেন প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ১১৫৫১০২ নম্বর ইনডেক্সে এপিওভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করেন সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। বেতন তুলে চুক্তি মোতাবেক প্রতি মাসে তা পরিশোধ করেন। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসে চেক বন্ধক রেখে বিভিন্ন সমিতি ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে ৫ লাখ টাকা ঋণগ্রহণ করে তার ঘুষের টাকা পরিশোধ করার প্রস্তাব দেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু এ ঋণের কিস্তি দিতে চাকরির সব বেতন কর্তন হবে বলে এতে রাজি হননি শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম তার বেতন বন্ধ করেন এবং ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সামনে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন মনোয়ারুল।

বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপ পরিচালক এবং জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক পুরো পরিবারকে দেখে নেওয়ার ও চাকরিচ্যুত করার হুমকী দেন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৭ জানুয়ারি আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই শিক্ষক।  

সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কিস্তিতে টাকা দিতে চেয়েছি। প্রধান শিক্ষক ঋণ নিয়ে একসঙ্গে পরিশোধের জন্য চাপ দেন। ঋণের কিস্তি দিতে পুরো বেতন চলে যাবে। তাই ঋণ করে দেইনি। এজন্য প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বেতন বন্ধ করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন। বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেওয়ায় এখন স্বাক্ষর নেওয়া কাগজটিতে চাকরিচ্যুত করার হুমকী দিচ্ছেন।  

বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক পেশিশক্তিতে একক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। প্রতিবাদ করলে চাকরিচ্যুত করার হুমকী। মেধাবি শিক্ষক মনোয়ারুল অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছেন প্রধান শিক্ষক। ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমড়ীরহাট এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, যেহেতু অভিযোগ করেছে, সেহেতু তদন্ত কর্মকর্তাকে লিখিত বক্তব্য দেওয়া হবে। গণমাধ্যমে তথ্য দিতে বাধ্য নই। যা লেখার লিখে যান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফ মাহফুজ বাংলানিউজকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দায়েরকরা অভিযোগটি আমাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। খুব দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি নিস্পত্তি করতে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে বলা হয়েছে। না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।