ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘পরিবেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২০
‘পরিবেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজ

ঢাকা: পরিবেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। 

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।  

পাঠকপ্রিয় দৈনিক কালের কণ্ঠ ও নির্মাণপ্রতিষ্ঠান কনকর্ডের যৌথ উদ্যোগে ‘টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

 

সভার প্রধান অতিথি শাহাব উদ্দিন বলেন, টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ করা কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।  এক্ষেত্রে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

‘সরকার ইতোমধ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’ 

পরিবেশের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ইট পোড়ানো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে ভূমি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনই বায়ুও দূষিত হচ্ছে। এটি শুধু ঢাকা শহর কিংবা এর আশপাশেই নয়, দেশের যেসব অঞ্চলে ইট পোড়ানো হচ্ছে সেখানেই পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।  

ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লকের ব্যহারের কথা উল্লেখ করে পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্লকের ব্যবহার করছে। আমাদেরও ধীরে ধীরে ব্লক ব্যবহারে চলে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা।  ছবি: জিএম মুজিবুর/বাংলানিউজ‘আমরা সরকারি কাজে ২০২৫ সাল নাগাদ শতভাগ ব্লক ব্যবহার নিশ্চিত করবো। এক্ষেত্রে ২০১৯-২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ, ২০২০-২১ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ, ২০২১-২২ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ ও ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ ব্যবহার  করা হবে। আমরা বেসরকারিভাবেও চেষ্টা করবো এটির ব্যবহার বাড়াতে। ’

ইটের ভাটা মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি ইটভাটার মালিকদেরও অনুরোধ করবো, তারাও যেন সবাই ব্লকে চলে আসেন। এক্ষেত্রে আমরা তাদের আইনি ও আর্থিক সহায়তা দেবো।  

‘হঠাৎ করেই ব্রিক ফিল্ড ভাঙা বা বন্ধ করা হয়নি। ২০১৩ সালে আইন থেকেই বলা হয়েছে এবং ২০১৯ সালে এটি বন্ধ করা হবে। ’

সবাইতে পরিবেশ সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে পারলে বায়ুদূষণ বন্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রচারণাটা জরুরি।  

সভায় অংশ নিয়ে কনকড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহরিয়ার কামাল বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পরিবেশ দূষণ সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু ভিশনারি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দূষণ সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে।  

বাংলাদেশে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আসাদুর রহমান খান বলেন, ইট সবচেয়ে সস্তা নির্মাণসামগ্রী। এটি ট্রেডিশনাল ব্যবসা। ইটের বিকল্প ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি আমাদের দেশে। এখানে সিসি ব্লক এর বাজার নেই, বাজার তৈরি করতে হবে।  

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, পরিবেশবান্ধব সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন বলেন, টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রীর জন্য গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। গবেষণা ছাড়া কাউকে বন্ধ বা কাউকে অনুমতি দিলে এটি ঠিক হবে না। এজন্য গবেষণা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহ-সভাপতি মামনুন মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে টেকসই সম্পর্কটা চলে আসে। যা সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর তা বন্ধ করতে হবে।

গোলটেবিল আলোচনা সভার সঞ্চালক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে সচেতনতার বিকল্প নেই। আমাদের দেশ আমাদেরই গড়তে হবে। এক্ষেত্রে দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।  

গোলটেবিল আলোচনা সভায় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মো. শামীম জেড বসুনিয়া, কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত  সম্পাদক মোস্তফা কামাল, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য মেজর (অব.) প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, পরিবেশ অধিদপ্তরের (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) পরিচালক মো. জিয়াউল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মীর তানভীর হোসাইন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. নূরুজ্জামান মুন্না, অক্সফামের আরবান ম্যানেজার আনিসুর রহমান চৌধুরী, বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
এসএমএকে/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।