ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা আতঙ্কে রাজশাহীতে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২০
করোনা আতঙ্কে রাজশাহীতে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা

রাজশাহী: পাঁচ বছরের ফায়সাল আলম মাস্ক পরে বাবার কোলে চড়েছে। বাবা হাসান শাহরিয়ারের নাক-মুখও মাস্কে ঢাকা। রাজশাহী মহানগরের আরডিএ মার্কেটের সামনের ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন তিনি। ছেলে অস্বস্তি বোধ করছিল নাক-মুখ ঢাকতে। কিন্তু বাবা সতর্ক, ছেলে যেন মাস্ক খুলতে না পারে। 

হাসান শাহরিয়ার বলেন, বাতাসে ধুলোবালির জন্য আমি আগেও রাস্তায় অধিকাংশ সময়ই মাস্ক পরে চলাফেরা করতাম। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে সুরক্ষার জন্য নিয়মিতই মাস্ক ব্যবহার করছি।

পরিবারের সবার জন্যও মাস্ক কিনেছি।  

অনেকটা এভাবেই বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে হঠাৎ করে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা। চীনসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার।  

সংক্রমণ ঠেকানো ও ধুলোবালির হাত থেকে সুরক্ষা পেতে রাজশাহীতে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে। ফলে বাজারে মাস্কের দামও বেড়েছে, সঙ্গে সংকটও তৈরি হয়েছে।  

রাজশাহীর বেশ কয়েকটি এলাকার ফার্মেসি, মেগা শপ ও ফুটপাথের হকারদের দোকানে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।  

রাজশাহী মহানগরের লক্ষ্মীপুর, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ একাধিক ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে মাস্কের চাহিদা বেড়ে গেছে। ওষুধের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের সংখ্যাও বেড়েছে। কেউ কেউ আগাম সর্তকতার জন্য পুরো বক্স সহকারে মাস্ক কিনছেন। আবার মাস্কের সরবরাহও কমে গেছে৷ অর্ডার দিয়েও কোম্পানির কাছ থেকে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।  

মহানগরের ফার্মেসিতে মিলছে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক। মানভেদে একেকটি মাস্কের ভিন্ন ভিন্ন দাম। ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা বলছেন, সার্জিক্যাল মাস্ক, ফিল্টার মাস্ক, রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক, কটন মাস্ক, স্পঞ্জঅ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক বিক্রি হচ্ছে বেশি।  

চাহিদা বেশি থাকায় বেড়েছে দামও। আগের তুলনায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে যেখানে প্রতিপিস মাস্ক ২০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০-৫০ টাকায়।

ওষুধ দোকানগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, আগে প্রতিবক্স মাস্ক তারা কিনতেন ৭০ টাকায়। যা প্রতিপিস তিন টাকা দরে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন বক্স প্রতি দাম পড়ছে ৭৫০ টাকা। চাহিদার কারণে দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। তবুও মাস্কের সংকট রয়েছে।

ক্রেতারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিষয়টি ছড়ানোর খবরেই বাজারে মাস্ক বিক্রি হয়েছে দ্বিগুণ দামে। এরপর কোথাও কোথাও তা বিক্রি হচ্ছে তিনগুণ দামে। আর এজন্য বাজার মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করছেন তারা।  

মহানগরের লক্ষীপুরের আরিশা ফার্মা অ্যান্ড সার্জিক্যাল ফার্মেসির বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাস আসার পর দোকানে থাকা সব মাস্ক শেষ হয়েছে। অনেকেই এসে ফিরে যাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে চাহিদা খুব বেশি।  

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পাশে একটি ফার্মেসিতে মাস্ক কিনতে এসেছিলেন জমিরুল ইসলাম। কিন্তু দামের ঊর্ধ্বগতিতে মাস্ক কেনার আশা ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন দোকান থেকে। চলে যাওয়ার সময় তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চারটি ফার্মেসিতে গেলাম মাস্ক কিনতে। কিন্তু দু’টি দোকানে পেলাম। তাও আবার দাম অনেক বেশি।  

জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পার্থ মনি বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাস শুধু চীনেই নয়। অন্য দেশেও ছড়িয়েছে। তাই মানুষকে সতর্কতার সঙ্গে বাইরে চলাফেরা করতে হবে। ঠাণ্ডা জ্বর, সর্দি করোনার লক্ষণ। যদিও মাস্ক ব্যবহারে এ ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। এর পর যে কোনো ‘ফ্লু’ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করাটা ভালো।  

তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। কেউ নিজেকে অসুস্থ মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২০ 
এসএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।