ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাজশাহীতে নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২, নিখোঁজ ৭

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২০
রাজশাহীতে নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২, নিখোঁজ ৭ নৌকায় করে ফিরোনি অনুষ্ঠানে যাচ্ছে বর-কনে পক্ষের লোকজন।

রাজশাহী: রাজশাহীর পদ্মানদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মৃত নারীর নাম হলো মনি বেগম (৪৫)। তিনি নিখোঁজ কনের চাচি। এই নিয়ে রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দুইজনে দাঁড়ালো।

এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরও সাতজন। নিখোঁজদের খুঁজতে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে শনিবার (৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে চারটি উদ্ধারকারী ইউনিট।

এর মধ্যে রাজশাহী সদর ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি রংপুর থেকে আসা একটি, বিআইডব্লিউটির একটি এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি ইউনিট নদীতে কাজ করছে।

এর আগে শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলে। পরে মধ্যরাতে উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

শনিবার সকাল থেকে মোট চারটি ইউনিট আবার উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। এর মধ্যে রাজশাহীর চারঘাটের ইউসুফপুর সীমান্তে পদ্মা নদী থেকে বোরকা পরা অবস্থায় মধ্যবয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে বিজিবির টহল দল।

বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়া উদ্দিন মাহমুদ জানান, শুক্রবার রাত থেকেই বিজিবি সদস্যরা নিখোঁজদের উদ্ধারে ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে রাজশাহী চারঘাট সীমান্ত পর্যন্ত স্পিডবোট নিয়ে টহল পরিচালনা করছে।

নিখোঁজদের উদ্ধারে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে তাদের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। চারঘাটের ইউসুফপুর সীমান্তের পদ্মানদী থেকে বোরকা পরিহিত অবস্থায় মাঝবয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে স্বজনরা তার পরিচয় শনাক্ত করে।

এদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় প্রায় ২৪ জন নিখোঁজ ছিল। তবে রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছেন আরও ১৭ জন। তাই এখন প্রায় সাত জন নিখোঁজ রয়েছেন।

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও বিআইডব্লিউটির তিনটি ইউনিট এবং বিজিবির একটি ইউনিট যৌথভাবে পদ্মায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। বর্তমানে উজানের ৫০০ মিটার গভীরে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। দুপুরে ভাটির ৫০০ মিটারে অনুসন্ধান চলবে।

তিনি আরও বলেন, মানুষ পানিতে ডুবলে সাধারণত ৩৬ ঘণ্টা পর ভেসে উঠতে শুরু করে। এজন্য নৌ-পুলিশ, মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকা থেকে শুরু করে পদ্মাপাড় ঘেঁষে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে থাকা চারঘাট উপজেলা পর্যন্ত নিখোঁজদের খোঁজে টহল দিচ্ছেন।

এর আগে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানায়, পদ্মানদীতে বিয়ে বাড়ির দু’টি নৌকা ডুবে যায়। দুই নৌকায় প্রায় ৩৮ জন যাত্রী ছিল। ঘটনার পর উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ জনকে। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পর মরিয়ম খাতুন নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। রাত পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল প্রায় ২৪ জন। তবে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছে আরও ১৭ জন। এ ঘটনায় প্রায় সাত জন নিখোঁজ রয়েছেন। তারা শুক্রবার সন্ধ্যায় বরের বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষে নতুন বউ নিয়ে ফিরছিলেন। ফিরোনি অনুষ্ঠানের জন্য বর-কনেসহ কনে পক্ষের লোকজন নদীর ওপারে চরখিদিরপুর থেকে ওপারে থাকা পবা উপজেলার ডাঙেরহাটে ফেরার পথে মহানগরীর রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে থাকা মাঝ নদীতে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ছয়জন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া উদ্ধারকৃতদের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত শিশুর মরদেহ এখন তার মহানগরীর বসুয়ার নিজ বাসায় নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে বসুয়া জামে মসজিদে তার নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এই নিয়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো দু’জনে।

এছাড়া রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল নৌকার মাঝি খাদিমুল ইসলাম (২৩), রতন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২২), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তারকে (৬)। আর রতন ও তার স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তাদের ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম খাতুনকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। আর মেয়েকে নিয়ে নদীতে সাঁতরে উঠেছিলেন সুমন-নাসরিন দম্পতি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২০/আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা,

এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।