এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের সময় দুই কার্যদিবসের মধ্যে এর প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে রোববার (০৮ মার্চ) রাতেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল।
তদন্ত কমিটির দাখিল করতে যাওয়া ওই প্রতিবেদনে এই নৌ দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাজশাহী জেলা এডিএম আবু আসলাম বলেন, ছোট ওই ডিঙ্গি নৌকায় যেখানে ৪/৫ জন যাত্রী নেওয়া সম্ভব সেখানে ২০ জনেরও বেশি করে যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। ফলে মাঝ নদীতে হালকা ঝড়ের কবলে পড়ে পরপর দুইটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ওই দুই নৌকার মাঝি বা নৌকার যাত্রীদের কারোও কাছেই লাইফ জ্যাকেট ছিলো না। তাই ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য মাছ ধরার নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা ও প্রমোদতরী আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। সেইসাথে নৌকার মাঝিরও বয়স নির্ধারণ করে দেওয়াসহ প্রতিটি নৌকায় যাত্রী ধারণ ক্ষমতা লিখে দেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত কমিটির ওই প্রতিবেদনে।
এদিকে, রাজশাহীর পদ্মায় বর-নববধূসহ নৌকা ডুবির ঘটনায় রোববার আরও দুই মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট জনে। তারা সবাই নববধূবেশী সুইটি খাতুন পূর্ণিমার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়। তবে এখনও সুইটির সন্ধান মেলেনি।
রোববার তৃতীয় দিনের মতো পদ্মা নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায় সমন্বিত উদ্ধারকারী দল।
শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় নৌকোডুবির ঘটনার পর শনিবার (০৭ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ নয়জনের মধ্যে ছয়জনের এবং রোববার বিকেল পর্যন্ত আরও দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া দ্বিতীয় নৌকাটি নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে শনিবার দুপুরে অপরটি উদ্ধার করা হয়েছিল। এর পর দুপুর দেড়টার দিকে রুবাইয়া আক্তার স্বর্ণার (১২) মরদেহ উদ্ধার করেন জেলেরা। জাল ফেলা হলে তার মরদেহ উঠে আসে। রুবাইয়ার বাবার নাম রবিউল ইসলাম রবি। তাদের বাড়ি পবার আলীগঞ্জ মোল্লাপাড়ায়। সে কনের ফুপাতো বোন এবং অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এরপর বেলা ৩টার দিকে রাজশাহীর চারঘাটের টাঙনে আরোও একটি মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহটি নিখোঁজ নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমার খালা আঁখি খাতুনের (২৫)। আঁখির বাবার নাম আবুল হোসেন। তার বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামে। আঁখির স্বামীর বাড়ি মহানগরের ভাটাপাড়ায়। তার নাম আসাদুজ্জামান জনি। তিনি হড়গ্রাম পূর্বপাড়ার বাসিন্দা।
এই নিয়ে পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় মোট ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো। তবে এখনও নিখোঁজ আছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০)।
রোববার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম জানায়, পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন সুইটি। তাই সুইটির মরদেহ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। এর পাশাপাশি পদ্মা সংলগ্ন নাটোর ও কুষ্টিয়া জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও থানাগুলোতে বার্তা পাঠানো হয়েছে, কোথাও যদি কোনো মরদেহ দেখা যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি উদ্ধার করে রাজশাহী জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে।
এর আগে গত শুক্রবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় পদ্মার চরে বৌ-ভাত অনুষ্ঠান শেষে বর-নববধূসহ ৪১জন যাত্রী নিয়ে দুইটি নৌকা কনেপক্ষের বাড়িতে ফিরছিল। ফেরার পথে মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় দুইটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বর রুমনসহ ৩২ জন শুক্রবার রাতেই জীবিত উদ্ধার হন। পরে নিহত ৮ জনের মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে প্রশাসন।
প্রাথমিকভাবে লাশ দাফন-কাফনের জন্য জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। ওই কমিটির দুই কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে রোববার প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এসএস/এবি