বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকার বস্তিতে ক্ষতিগ্রস্তরা পুড়ে যাওয়া টিন, আসবাবপত্র, লোহাসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম সরাতে ব্যস্ত।
মালামাল সরানোর সময় ক্ষতিগ্রস্ত রহিমের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ পাশের ইসলামীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পেলেও অনেককেই থাকতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে।
দু-একটি হাড়ি পাতিল, প্লেট-গ্লাস আর ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে পলিথিনের ছাউনির নিচে বসে আছেন মো. আলমগীর (৪৫)। রিকশা চালানোর ঘাম ঝরানো অর্থে গড়েছিলেন পুড়ে যাওয়া স্বপ্নের টিনের ঘর। স্ত্রী ও কন্যা সন্তানদের নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি। তিলে তিলে গড়ে তোলা ছোট্ট এই থাকার ঘরটি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।
আলমগীরের জন্মস্থান ভোলা। ছোটবেলাতেই নদী গ্রাস করেছে তার ঘরবাড়ি। তারপরই জীবন যুদ্ধে নামেন। আর সেই জীবন যুদ্ধের শুরু এই রূপনগর এলাকার বস্তিটিতে। দিনমজুরের কাজ করে বিভিন্ন বস্তিতে বাস করেছেন তিনি। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। গত তিন বছর আগে টাকা জমিয়ে গড়েছিলেন ঈদগা মাঠের পাশে ডোবার উপরে বাঁশ-কাঠ আর টিনে তৈরি এই ঘরটি। বুধবার স্ত্রী-সন্তানদের ঘরে রেখে জীবিকা নির্বাহের জন্য রিকশা চালাতে বের হয়ে যান তিনি। যাত্রী নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর যাওয়ার পথে হঠাৎই রূপনগর বস্তিতে আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখেন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তিল তিল করে গড়ে তোলা সেই স্বপ্নের কুটির।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যদি সময়মতো আসতো হয়তো আমার ছোট্ট ঘরটি আগুনে পুড়তো না।
উপার্জিত অর্থে গড়ে তোলা ঘর পোড়ার ঘটনা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ইলেকট্রিশিয়ান চাঁন মিয়া (৩৪)। তিনি বলেন, প্রায় ১৮ বছর আগে অভাবের তাড়নায় ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে শেরপুর থেকে ঢাকায় আসি। সেই বয়স থেকেই বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কখনো রংয়ের কাজ, কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ আর কখনো ইলেকট্রিক্যাল কাজে হেলপারের কাজ থেকে প্রায় কাজই আয়ত্ত করে নিয়েছি। পরে ইলেকট্রিক কাজকেই তার মূল পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পর ঘুরে যায় জীবনের চাকা। গত বছর রূপনগর বস্তিতে দুই রুমের টিনের ঘর তৈরি করি।
‘আমি গরিব, এই কাঠ-বাঁশ-টিনের তৈরি ঘরই আমার কাছে রাজপ্রাসাদ। এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান নিয়ে খুবই সুখে দিন কাটছিল আমার। সব সুখ যেন কেড়ে নিল এই আগুন। আগুন আমার টিনের ঘর পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। পুড়ে ছাই করেছে আমার স্বপ্নের রাজপ্রাসাদ। ’
তিনি আরও বলেন, আগুন নেভাতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। কিন্তু এত বড় আগুন নেভানো অসম্ভব। আর ফায়ার সার্ভিস যদি সময়মতো এসে পৌঁছাতো তাহলে আমাদের এই পাশের ঘরগুলো পুড়তো না। আমি দেখেছি শিয়ালবাড়ি রজনীগন্ধা মাদরাসার পূর্ব পাশ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছিল। সেখান থেকে এ পর্যন্ত (ঈদগাহ মাঠের পাশে) আগুন আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। কিন্তু এত সময় পেয়েও ফায়ার সার্ভিস আমার টিনের ঘর রক্ষা করতে পারেনি।
বুধবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকার ‘বারেকের বস্তিতে’ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘর। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে গেছে বস্তি।
আরও পড়ুন>> রূপনগরে বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ২৫ ইউনিট
আরও পড়ুন>> রূপনগর বস্তিতে পুড়েছে প্রায় ২০০ ঘর, আগুন নিয়ন্ত্রণে
আরও পড়ুন>> পানি সংকটের কারণেই কমছিল না আগুনের তীব্রতা
আরও পড়ুন>> বস্তির নেতাদের লিস্ট হবে: ইলিয়াস মোল্লা
আরও পড়ুন>> পেটের জ্বালা মেটাতে ধ্বংসস্তূপে জ্বলছে চুলা
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০
এমএমআই/এইচএডি/