ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পাহাড়ে প্রাণহীন বৈসাবি

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
পাহাড়ে প্রাণহীন বৈসাবি

খাগড়াছড়ি: আঁধার কেটে সূর্য যখন স্নিগ্ধ আলো বিলাতে শুরু করে, ঠিক তার আগ মুহূর্ত থেকে পাহাড়ের ঘরে ঘরে বারতা নিয়ে আসে বৈসাবি উৎসব। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সবাই মিলে ছোটে নদী, ছড়া, খালের পানে। লক্ষ্য গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানো। চাকমা সম্প্রদায়ের এই ফুল বিজু উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শুরু হয় বৈসাবি উৎসব।

তবে এবারের চিত্র আলাদা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ঘরে বসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের।

উৎসব এসেছে ঠিকই, তবে নীরবে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে ম্লান সব আয়োজন। উৎসবের নগরীতে এখন সুনসান নীরবতা। নতুন কাপড় কেনা, আপ্যায়নের আয়োজন, কিংবা দূর থেকে প্রিয়জনের কাছে ছুটে আসা। এবার কোনোটিই পায়নি পরিপূর্ণতা। যদিও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির পাশের ছড়া কিংবা পানির উৎস আছে এমন স্থানে ফুল দিয়েছেন। প্রতিবছর এসময় বিগত বছরের দুঃখ গ্লানি ভুলে আত্মীয়-স্বজন, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে হয়।

১২ এপ্রিল থেকে মূলত শুরু হয় বৈসাবি উৎসব। চাকমা সম্প্রদায়ের ফুল বিজুর মধ্য দিয়ে হয় সূচনা। খাগড়াছড়ির সবচেয়ে বড় আয়োজন হয় খাগড়াছড়ির খবং পড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর পাড়ে। স্থানীয়দের আগে থেকে দেওয়া ঘোষণার কারণে কেউ ফুল ভাসাতে আসেনি এবার। যে স্থান ফুলে ফুলে ভরে উঠতো, সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হতো সেটি এখন সুনসান।

..এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সুধীন কুমার চাকমা বলেন, এমনভাবে উৎসব উদযাপন করতে হবে কোনোদিন ভাবিনি। আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বৃহত্তর স্বার্থে অবশ্যই আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কেউ একজন সংক্রমিত হলে পুরো জেলা বিপদে পড়বে। তাই্ আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি ঘরে ঘরে যেন উৎসব উদযাপন করে। সবাই সুস্থ থাকলে আগামী বছর দ্বিগুণ উদ্দীপনা নিয়ে আমরা উৎসব করবো।

১৪ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বটতল এলাকায় বসতো মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের সবচেয়ে বড় আয়োজন। এখানে সাংগ্রাই র্যা লি, জলকেলি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠতো হাজার হাজার মানুষ। তরুণ তরুণীর বর্ণিল পোশাক নজড়ে পড়ার মতো। পর্যটকদের উপস্থিতিও থাকতো বেশ। এখানেও এবছর উৎসব থাকছে না। এমনকি বৌদ্ধ বিহারেও জনসমাগম না করার জন্য বলা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি মারমা উন্নয়ন সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক বাশরী মারমা বলেন, শুরুর দিকে উৎসব করার একটা সিদ্ধান্ত থাকলেও পরবর্তীসময়ে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি দেখে তা বাতিল করি। আমরা সবাইকে বলছি যাতে পরিবার নিয়ে ঘরে উৎসব করে। এমনকি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাও যাতে ঘরে করা হয়। বিহারে গেলেও যেন বিক্ষিপ্তভাবে যান।

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী গরয়া নৃত্য উৎসব হতো খাগড়াপুর এলাকায়। এছাড়াও এলাকাভিত্তিক উৎসবের আয়োজনতো থাকেই। বৈসাবি শুরুর মুহূর্তে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের র্যা লিতেও হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি থাকতো। ১৪ এপ্রিল নববর্ষের দিনে শহরের হাইস্কুল মাঠ থেকে বের হতো র্যা লি। যা টাউনহল প্রাঙ্গণে এসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মিলিত হতো। মহামারির দিনে এসবের কিছুই থাকছে না।

মূলত তিন সম্প্রদায়ের বাৎসরিক প্রধান উৎসবের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি; নামের সৃষ্টি। বৈ-তে ত্রিপুরাদের বৈসু, সা-তে মারমাদের সাংগ্রাই আর বি-তে চাকমা সম্প্রদায়ের বিজুকে বোঝানো হয়েছে।

চাকমারা রোববার থেকে ফুল বিজু, মূল বিজু ও গজ্জাপয্যা পালন করবে। ওইদিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। সেই সঙ্গে সব বয়সী মানুষ নদী, খাল কিংবা ঝরনায় গঙ্গাদেবীর পূজা করবে। ত্রিপুরারা হারিবৈসু, বিষুমা, বিচিকাতাল এবং মারমারা পেইংচোয়ে, আক্যে ও অতাদা নামে আলাদা আলাদা নামে উৎসব করে।

প্রাণবন্ত হয়ে উৎসব আসুক আবার ঘরে ঘরে। শুদ্ধ হোক ধরণী। ততদিন ঘরে থেকে নিরাপদ রাখি নিজেকে। নিরাপদ রাখি দেশকে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২০
এডি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।