ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা: বগুড়ার দর্জিপাড়ায় নেই আগের সেই সরগরম

কাওছার উল্লাহ আরিফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
করোনা: বগুড়ার দর্জিপাড়ায় নেই আগের সেই সরগরম ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ। প্রতি বছর এ সময়টাতে দর্জিপাড়ার মানুষ নতুন পোশাক বানাতে দিনরাত ব্যস্ত থাকতো। দর্জিপাড়ায় দর্জিদের ঘুম হারাম হয়ে যেত কাজের চাপে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পোশাক তৈরির কারখানায়-কারখানায় চলতো ঘুমহীন, বিশ্রামহীন শ্রমিকের কাজ।

দর্জিপাড়ার পাশ দিয়ে গেলেই বাতাসে ভেসে আসতো সেলাই মেশিন আর কাঁচির শব্দ। শব্দই বলে দিতো কারিগররা ঈদের পোশাক তৈরিতে কতোটা ব্যস্ত।

কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাস সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। দর্জিপাড়ায় নেই শ্রমিকের সেই ঘুমহীন, বিশ্রামহীন কাজের ব্যস্ততা।

মঙ্গলবার (১৯ মে) বগুড়া শহরের একাধিক দর্জি-প্রতিষ্ঠান ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কাজহীন তাদের অলস সময় কাটানোর কথা। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার স্বল্প কাজ হাতে নিয়ে ব্যতিক্রম সময় পার করছে তারা।

কেননা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোর সঙ্গে সঙ্গে দোকান-পাট ও মার্কেটগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। এ ছুটি কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। এক পর্যায়ে বগুড়ায় করোনায় আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২১ এপ্রিল থেকে জেলাকে লকডাউন বা অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

ছবি: বাংলানিউজপরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর গত ১০ মে সারাদেশের ন্যায় বগুড়ার মার্কেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে কেনা-কাটা করার জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কেউ তা না মানায় তিনদিনের মাথায় ১৩ মে দুপুরে প্রশাসনের নির্দেশে তা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সোমবার (১৮ মে) থেকে পুনরায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শহরের সকল মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের কারণে এমন পরিস্থিতিতে দর্জিপাড়ায় খুব অল্প পরিসরে অর্ডার নিয়ে কাজে হাত দিয়েছেন শ্রমিকরা। প্রশাসনের সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলাচলের বাধাঁধরা সময়ে মধ্যে আর কতটুকু কাজ এগিয়ে নেওয়া যায়। এ কারণেই শহরের দর্জিপাড়ায় নেই আগের সেই সরগরম।

আল-আমিন, সোহরাব, আলী, পিন্টু শেখ-সহ একাধিক পোশাক কারিগর বাংলানিউজকে জানান, ২৫ রমজান চলে গেছে। করোনার কারণে এ বছর ঈদে তাদের কোনো ব্যস্ততা নেই। শহরের মার্কেটগুলো সম্প্রতি চালু হওয়ায় কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। অনেক মানুষ করোনার কারণে কেনাকাটা থেকেও বিরত থাকছেন। আর তাই তাদের হাতে কাজ খুবই সীমিত।

 

তারা বলেন, এ বছর যেহেতু করোনা দূর্যোগের কারণে প্রায় কর্মহীন সময় কাটছে আগামীতে যেন আল্লাহ এমন সময় আর না দেয় এমনটাই কামনা তাদের।

তারা আরও বলেন, তাদের মধ্যে নেই ঈদের আনন্দ। কেননা বিগত বছরগুলোতে দিনরাত পরিশ্রমের মাধ্যমে দুটো টাকা রোজগার করে পরিবারের মানুষগুলোর সঙ্গে ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিতেন তারা।

এস এম টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, করোনার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে টেইলার্স শিল্পে। বিগত প্রায় দু’মাস শহরের মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, তার টেইলার্সের ২০ থেকে ২৫টির মেশিনের মধ্যে চালু করা হয়েছে মাত্র ৫ টি। এতে তার যেমন ব্যবসায়ীক অবস্থা দূর্বল হয়ে পড়েছে তেমনি শ্রমিকদেরও ।  

যেহেতু স্বল্প পরিসরে এ বছর কাজের যা অর্ডার নেওয়া হয়েছে তার মান ঠিক রেখেই কাজ করছেন শ্রমিকরা, তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা ও মান বজায় রেখে কারিগরেরা পোষাক বানিয়ে থাকেন। সবাই চেষ্টা করেন সেরা মানের পোশাক তৈরি করতে, যোগ করেন তিনি।

শিউল টেইলার্সের ম্যানেজার নাঈম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যেক বছর পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই কারিগররা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো। রোজার ১৫ টার মধ্যে পোশাক তৈরি কাজের অর্ডারের পর্ব বন্ধ হয়ে যেত। কেননা এর পরে অর্ডার নিলে তা সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে পারেন না তারা।

ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন, বিগত বছরে তাদের টেইলার্সে ২৫-৩০ জন দর্জি শ্রমিক কাজ করলেও এ বছর ঈদের আগে দীর্ঘদিন দোকান-মার্কেট বন্ধ থাকায় কাজের চাপ ও চাহিদা কোনটাই নেই। তাই মাত্র ৮ জন দর্জি শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। আগে যেখানে প্রতি দর্জি শ্রমিক দিনরাতে গড়ে ৭-৯টি শার্ট বা প্যান্ট তৈরি করতেন বর্তমানে সেখানে প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময়ে (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত) তৈরি হচ্ছে ২-৩ টি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে গড়ে দিনে শার্ট ও প্যান্ট মিলে বড়জোর ৪০-৫০ পিস অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। অথচ গেল বছর ৪০০-৭০০ পিস পর্যন্ত পোশাক তৈরির অর্ডার পাওয়া গেছে।

দীর্ঘদিন শহরের মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় এবার ঈদে ক্রেতারা রেডিমেড পোশাক কেনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন বলেও যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
কেইউএ/ইউবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।