ঢাকা, শনিবার, ১৯ পৌষ ১৪৩১, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা: মরদেহ দাফনে অকুতোভয় ইয়াসিন শরীফ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
করোনা: মরদেহ দাফনে অকুতোভয় ইয়াসিন শরীফ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের শেষ গোসল, কাফন, জানাজা এবং দাফন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন অকুতোভয় মো. ইয়াসিন শরীফ মজুমদার।

ফেনী: ‘করোনার ভয়ে লাশ উঠোনে পড়ে ছিল ১০ ঘণ্টা’, ‘করোনা উপসর্গে মৃত্যু, লাশ দাফন করেনি পরিবার’, ‘করোনার ভয়ে ঢামেকের সামনে মাকে ফেলে চলে গেলো সন্তান’- এখন গণমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে এমন সংবাদ শিরোনাম। অন্তিম শয্যায়ও আপনজনরা পাশে নেই, জানাজায় প্রিয়জনদের ঢল নেই। চাইলেও কাফনের কাপড় সরিয়ে প্রিয়মুখটি ছোঁয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন মৃত্যু ও শেষ বিদায়ের দৃশ্য কেউ কখনো দেখেনি। করোনা ভাইরাস পাল্টে দিয়েছে আমাদের মানবিকতা বোধ।

এমন বিপর্যয়েও রয়েছে মানবিকতার ভিন্ন চিত্র। স্বজনরা যেখানে মৃতদেহ রেখে পালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে কেউ কেউ নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে অচেনা মানুষের মরদেহ দাফন করছেন।

হয়ে উঠছেন অচেনা মরদেহের স্বজন। এমনই একজন ফেনীর সীমান্ত উপজেলা পরশুরামের মো. ইয়াসিন শরীফ মজুমদার।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের শেষ গোসল, কাফন, জানাজা এবং দাফন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন অকুতোভয় ইয়াসিন শরীফ। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্যে নির্ভয়ে অংশ নেন তিনি।

একইসঙ্গে তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতিও। তবে এসময় রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি।

গত ২০ এপ্রিল গঠন করেন ‘পরশুরাম উপজেলা করোনা স্বেচ্ছাসেবক টিম’। এরপর ১ মাস ২০ দিনে দাফন করেছেন ১১টি মৃতদেহ। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত রোগী ছিলেন পাঁচজন।

ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও চাকরিজীবী মিলিয়ে ইয়াসিন শরীফের দাফন টিমের সদস্য সাতজন। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- মুহাম্মাদ আলা উদ্দিন, মনচুর আহাম্মদ, মো. জহিরুল ইসলাম হৃদয়, নাহিদ হায়দার, এনামুল করিম আজাদ, আবুল কালাম।

ইয়াসিন শরীফ জানান, এ দাফন টিমের সবাই নিজেদের জীবনের পরোয়া না করেই দিনের যেকোনো সময় ছোটেন মৃতদেহের দাফনে। প্রত্যেকেই হয়ে উঠেছেন অচেনা মৃত ব্যক্তিদের স্বজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এ পর্যন্ত ১১ জন মৃত ব্যক্তির গোসল, জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করেছি আমরা। প্রতিটি দাফনে ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। মৃত বাবার চেহারা পরিবার-সন্তানকে দেখাতে না পারা, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন যুগ্ম-সচিবকে দাফন করতে গিয়ে এলাকার মানুষের বাধার মুখে পড়া, এমনকি গোসল দিতে গিয়ে একটা বালতিও পাইনি। এরকম আরও হৃদয় বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষ অসহায় অবস্থায় আছে। করোনা রোগীর পাশে কেউই থাকে না। এ কারণে আমার উপজেলায় করোনায় মৃত কোনো ব্যক্তির যাতে গোসল, জানাজা ও দাফনে সমস্যা না হয়, সেজন্য আমরা দাফন টিম গঠন করি। এ দুর্যোগকালে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। ’

এ প্রসঙ্গে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ইয়াসিন শরীফের দাফন টিম ইতোমধ্যে উপজেলাব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছে। করোনা রোগী ও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনে এ টিম উপজেলা প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। ’

পরশুরাম পৌর মেয়র সাজেল চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলায় করোনা কিংবা করোনা সন্দেহে মৃত ব্যক্তিদের দাফনে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না। স্বজন না থাকলেও ইয়াসিন শরীফের দাফন টিম রয়েছে। তারা সব নিয়ম মেনে মরদেহ কবরস্থ করছেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
এসএইচডি/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।