মঙ্গলবার (২৩ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন ফজলে হোসেন বাদশা।
এসময় সংসদে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।
এর আগে বেলা ১১ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থমন্ত্রী একটি প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট করেছেন। আমি মনে করি বিশ্বের অর্থনীতি যখন বিপর্যপয়ের মুখোমুখি, পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়ন খাত যখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি তখন আমাদের প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট করা ঠিক হয়নি।
‘কারণ এখানে মনে রাখা দরকার ছিল আমাদের দেশে এই সরকার দারিদ্র্যসীমা ২১ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে কিন্তু সেই দারিদ্র্যসীমা বেড়ে এখন কত উপরে উঠবে? সেটা আমি জানি না। এমনও হতে পারে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ আবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। ’
বাদশা বলেন, আমাদের অতিদরিদ্রের হার বেড়ে যাবে। অনেক মানুষ গ্রামে ফিরে যাবে। অনেক সময় কর্মসংস্থান হারাবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও বাড়ানো দরকার। ১ কোটি লোককে সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে আনা হয়েছে। এটা শুভ খবর কিন্তু এটাকে আরও বাড়ানো দরকার।
প্রবৃদ্ধিনির্ভর বাজেট বর্তমান পরিস্থিতে অর্থনৈতিকভাবে কতখানি প্রযোজ্য তা ভেবে দেখার আহ্বান জানান বাদশা।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটা কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার
স্বাস্থ্যখাতের আমূল পরিবর্তন আনা এবং স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আজ সমস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার একটা কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। এটা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। এবং একটা কথা মনে রাখা দরকার আমাদের আশপাশে অনেক দেশ আছে।
‘আমাদের পাশে শ্রীলংকা আছে, আমাদের পাশে থাইল্যান্ড আছে, ভারত-পাকিস্তানও আছে। আজ তাদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন, আমাদের স্বাস্থ্যখাতে কী পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিগত দিনগুলোতে। এটা কি জনস্বাস্থ্যকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। ’
বাদশা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে এই সময়ে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এটা অপ্রতুল। এর চেয়ে বেশি কিছু বলবো না। এটা ভেবে দেখবেন।
অর্থমন্ত্রীকে সংবিধানের মূলনীতি পড়ার আহ্বান জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, অর্থমন্ত্রী একটু সংবিধানের মূলনীতি পড়ে দেখবেন। সংবিধানের মূলনীতিতে স্বাস্থ্যখাতকে বঙ্গবন্ধু কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেটা একটু দেখবেন। সংবিধান পড়ে আমাদের বাজেট তৈরি করা দরকার।
‘সংবিধান না পড়ে বাজেট তৈরি করতে গেলে বাংলাদেশের গতিমুখ পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আমরা বলি আমরা কানাডা হবো, আমরা আমেরিকা হবো, এই সমস্ত কথা এখন কিন্তু আর আসে না। এই সমস্ত বিছিন্ন কথা যে আসে ভ্রান্তি থেকে আসে। ’
স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির সমালোচনা করে বাদশা বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে একটি কথাই বলবো। ৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা বলেছেন। সেই কমিউনিটি ক্লিনিক যদি আমরা ধারাবাহিকভাবে বিকশিত করতাম, বাংলাদেশের তৃণমূলে আমরা যদি একটা ভিত্তি গড়ে তুলতে পারতাম তাহলে আজ যত বড় করোনা আসুক না কে তাকে মোকাবিলা করার একটা পথ খুঁজে পেতাম।
‘সেপথ ধরে আমরা এগোয়নি। বরং আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। সে সমস্ত অভিযোগের কথা আমি তুলতে চাই না। সম্প্রতি একটা অভিযোগ আছে এন৯৫ মাস্ক কিনতে গিয়ে দুর্নীতি করা হচ্ছে। এই করোনার মধ্যে যদি দুর্নীতির কথা আসে তবে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য হতে পারে না। ’
বাদশা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন মুছে ফেলা সম্ভব না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি একমত পোষণ করি এবং মনে করি বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছেন তার প্রতিফলন সংবিধানে আছে। সেই সংবিধানের কথা যদি আমরা মনে রাখি তবে বাংলার মানুষ কখনোই আমাদের ছুড়ে ফেলে দেবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২০
এমইউএম/এএ