রাজশাহী: রাজশাহীতে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিউটের (পিটিআই) অধীনে ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশনের (ডিপিএড) প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের প্রাপ্য ভাতা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। করোনাকালীন শিক্ষকরা অনলাইনে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয় প্রত্যেকের ৩ মাসের ভাতা কেটে নিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মৌখিক নির্দেশনার কথা বলে হিসাবরক্ষণ কার্যালয় ভাতা কেটে নিয়েছে। অথচ তারা এ ধরনের কোনো লিখিত নির্দেশনা দেখাতে পারেনি।
সূত্র জানায়, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) অধীন পরিচালিত পিটিআইগুলোতে দেড় বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। এর মধ্যে এক বছর প্রাতিষ্ঠানিক ও বাকি ছয় মাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে প্রায় তিন হাজার টাকা করে ১৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয় প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পিটিআইও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রাজশাহী পিটিআইর ডিপিএড ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা নেপ’র নির্দেশনা অনুযায়ী সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস পর্যবেক্ষণ, লগ বই, রিফ্লেক্টিভ জার্নাল প্রস্তুতসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে জুন মাসে অনলাইনে জুম অ্যাপের মাধ্যমে তাদের মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়। এ বাবদ রাজশাহী পিটিআইর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ডিপিএড প্রশিক্ষণার্থীরা জানুয়ারি-জুন মাসের ভাতা ও সাধারণ ছুটির জন্য ৩০ শতাংশ ভাতা দাবি করেন।
প্রশিক্ষণার্থী ও রাজশাহী পিটিআই কর্মকর্তাদের অভিযোগ, নেপ’র নির্দেশনা মেনে করোনাকালীন সাধারণ ছুটির মধ্যে অনলাইনে কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও করোনার কথা বলে প্রশিক্ষণ ভাতা না দিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক কার্যালয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো লিখিত নির্দেশনা দেখাতে পারেনি তারা।
শুধু তাই নয়, সরকারি ভাতা আয়করমুক্ত হলেও প্রশিক্ষণার্থীদের প্রাপ্য ৩০ শতাংশ ভাতার ওপর ১০ শতাংশ আয়কর কেটে বিল জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হিসাবরক্ষণ অফিস।
প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অন্য পিটিআই প্রশিক্ষণার্থীরা করোনাকালীন ছুটির ভাতা পেলেও রাজশাহী বিভাগের কিছু পিটিআইর ক্ষেত্রে ভাতা না দেওয়ার এই ব্যতিক্রম ঘটছে। রাজশাহী বিভাগের আটটি পিটিআইর মধ্যে পাঁচটি সম্পূর্ণ ভাতা পেলেও রাজশাহী, নাটোর ও পাবনার পিটিআই তা পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রাজশাহী পিটিআইর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষণার্থী আফারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দেশের অন্য পিটিআইতে প্রশিক্ষণার্থীরা ছয় মাসের সম্পূর্ণ ভাতা পেলেও আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। কিন্তু কেন? করোনা মোকাবিলায় সাধারণ ছুটির সময়ে আমরা সব কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। জুম অ্যাপের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছি। হিসাবরক্ষণ কার্যালয় অধিদফতর ভাটা কেটে নেওয়ার ব্যাপারে ‘মৌখিক’ নির্দেশনার কথা বলছে। কিন্তু রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি পিটিআই ঠিকই সম্পূর্ণ ভাতা পেয়েছে। তাহলে আমরা কেন পাবো না?
আরেক প্রশিক্ষণার্থী মানাজির রহমান বলেন, সাধারণ ছুটি চলাকালীন অনলাইনে ক্লাস পর্যবেক্ষণ, লগ বই, রিফ্লেক্টিভ জার্নাল প্রস্তুতসহ সব কার্যক্রম শেষ করেছি আমরা। কিন্তু আমাদের প্রাপ্য ১৮ হাজার টাকার মধ্যে মাত্র ৯ হাজার ৯০০ টাকা দিতে চাচ্ছে তারা। কোন নির্দেশনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এরও সুস্পষ্ট কোনো জবাব হিসাবরক্ষণ কার্যালয় দিতে পারেনি।
রাজশাহী পিটিআইর সুপারিন্টেনডেন্ট মো. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, হিসাবরক্ষণ কার্যালয় থেকে আমাকে আয়করসহ ২ মাস ১৬ দিনের ভাতা বাবদ বিল জমা দিতে বলা হয়েছে। তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ‘মৌখিক’ নির্দেশনার কথা বলছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত লিখিত কোনো নির্দেশনা তারা দেখাতে পারেনি।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালীন ছুটির জন্য ডিপিএড শিক্ষকদের ভাতার ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন শিক্ষকরা এ ভাতা পাবেন না।
তবে অর্থ সংশ্লিষ্ট এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে লিখিত কোনো নির্দেশনা ছাড়াই কেবল মুখের কথায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায় কিনা, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২০
এসএস/এইচজে