ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাঘারপাড়ার কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের বেহাল দশা

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২০
বাঘারপাড়ার কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের বেহাল দশা

যশোর: রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে যশোরের বাঘারপাড়ার কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের বেহাল দশা। কেন্দ্রটি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে।

নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কাগজপত্র, ভেঙে পড়েছে ঘরের চাল ও চারপাশের বেড়া।

স্থানীয়দের দাবী অযত্ন, অবহেলা ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে কেন্দ্রটির এমন বেহাল দশা হলেও সংস্কারের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারি সাহায্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের গাইদঘাট গ্রামে ২০০১ সালে কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রের উদ্যোগে গাইদঘাট গ্রামে দেশের প্রথম বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কার্যক্রম শুরু হয়। তারই আলোকে দেশে ‘বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদন মডেল’ এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি পায় যশোর।

সারাদেশে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল এলাকা হিসেবে বৃহত্তর যশোর অঞ্চল স্থান পায়। যার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১০ সালে কৃষক সংগঠক আইয়ুব হোসেন ও তার সহযোগী বন্ধু সাংবাদিক লক্ষণ চন্দ্র মন্ডলকে পুরস্কৃত করা হয়। ঢাকার ফার্মগেটে কৃষি তথ্য সার্ভিস মিলনায়তনে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পুরস্কার তুলে দেন।

পরবর্তীতে কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের তৎকালীন সভাপতি কৃষক সংগঠক আইয়ুব হোসেন কেন্দ্রের উদ্যোগে যশোরের ৬০টি গ্রামে ৬৪টি কৃষি ক্লাব গড়ে তোলেন। কৃষি ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে কৃষি  প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র।

আইয়ুব হোসেনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকার কৃষকেরা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশিক্ষিত হয়েছিল। যশোরের দশ হাজারের অধিক কৃষক কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন। প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করছেন। সেই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল অনুসরণ দেশে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের আন্দোলন শুরু হয়।

সম্প্রতি কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের ঘরটি ঘাস-লতা পাতায় ঢেকে গেছে। চালের টিন, দরজা, জানালাসহ ঘরে প্রবেশ পথে বাঁশের বেড়া ভেঙে গেছে। কেন্দ্রের চারপাশ ভর্তি ময়লা আবর্জনা। ঘরটি একপাশে হেলে পড়েছে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া টিনগুলো ঘরের ভিতর পড়ে আছে।

কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের সভাপতি সাংবাদিক লক্ষণ চন্দ্র মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের ঘরটি আম্পানে বিধ্বস্ত হওয়ার পরে আর সংস্কারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঘরটিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন পোষ্টার, ফেস্টুন, গবেষনামুলক বই-পুস্তক, আসবাবপত্র, মুল্যবান কাপজপত্র ঝড়, বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

অর্থের অভাবে কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের ঘরটি মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে লক্ষণ চন্দ্র বলেন, যেই কেন্দ্রের উদ্যোগে এক সময় দেশের স্বনামধন্য কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পদচারনা ঘটেছিল, এখন সেই কেন্দ্রের বেহাল দশা।

এ বিষয়ে বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সব্দুল হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকের স্বার্থরক্ষায় আমার পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, কৃষক নেতা আইয়ুব হোসেন ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। আইয়ুব হোসেনের মৃত্যুর পর এই কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রটি একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বর্তমান সময়ে সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় পুনরায় কিছুটা জীবন ফিরে পেলেও আশানুরুপ কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে, পাশাপাশি অস্থায়ী ঘর ভাড়া নিয়ে কেন্দ্রটি চালু রাখার কথাও বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০২০
ইউজি/এসই/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।