ঢাকা, বুধবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

সাদা শাপলায় জীবিকা নির্বাহ বিলাঞ্চলের মানুষের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২০
সাদা শাপলায় জীবিকা নির্বাহ বিলাঞ্চলের মানুষের সাদা শাপলা, ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বর্ষা মানেই প্রকৃতির নতুন সাজ। আর প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় দক্ষিণাঞ্চলের বিলসহ নিম্নাঞ্চগুলো।

বিশেষ করে বিলাঞ্চল তলিয়ে থাকলে ফসলি জমিগুলোই পানির নিচে চলে যায়। এই সময়টাতে ওই অঞ্চলের ফসলি জমিতে যেমন কোনো ধরনের ফসলের আবাদ হয় না, তেমনি দরিদ্র পরিবারগুলোর মানুষের হাতে তেমন কোন কাজও থাকে না।

অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে বিলাঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতিক মাছ শিকার ও বিলের পানিতে হওয়া শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশালের আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদী উপজেলার বিশাল একটা অংশজুড়ে বিলাঞ্চল রয়েছে। এসব বিলে প্রাকৃতিকভাবে শাপলার আবির্ভাব ঘটে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে। শুকনো মৌসুমে বিলের ভূমিতে ধানের আবাদ হলেও বর্ষায় বিলের পানিতে ফোটা সেই শাপলা তুলে, আর দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার করে বিক্রি করে স্থানীয়রা জীবিকা নির্বাহ করে।

এ বিলাঞ্চলগুলোতে সাদা ও লাল শাপলার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। তবে লাল শাপলা রান্না করে খাওয়ায় একটু ভিন্ন কৌশলের প্রয়োজন হওয়ায় সবজি হিসেবে সাদা শাপলার কদর বেশি। তাই সাদা শাপলা যেখানে সবজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে লাল শাপলা বিলের পানিতে ভেসে পর্যটকদের আকর্ষণ করছে।

.

স্থানীয়রা এ শাপলা ঘিরেই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর আশায় ডিঙে নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে শাপলা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। গ্রাম কিংবা শহরে শাপলার কদর বাড়ায় চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক।

আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চিত্ত রঞ্জন বৈদ্য জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস বিলের মধ্যে পানি থাকে। তখন এলাকায় কৃষিকাজ কমে যায়। আর্থিক সংকটের কারনে তাদের শাপলা কিংবা বিলের মাছ বিক্রি করে চলতে হয়। শাপলা বিক্রিতে বড় ধরনের কোনো মূলধনের প্রয়োজন না হওয়ায় দরিদ্র পরিবারের অনেকেই বর্ষা মৌসুমে শাপলা বিক্রি করছেন।  

স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় রায় ও নিতাই বৈদ্য জানান, বর্ষায় হাতে কাজ নেই। তাই গত দুই মাস যাবত শাপলা বিক্রি করছেন। প্রতিদিন পরিবারের সদস্যরা বিলের মাঝে ডিঙি নৌকা নিয়ে শাপলা তুলে আনেন। এরপর শাপলার মুঠ বেঁধে ভ্যানে সাজিয়ে সকাল হলেই শাপলা বিক্রিতে নেমে পড়েন। বর্ষার শুরুতে শাপলার দাম কিছুটা ভালো থাকলেও এখন তিন মুঠ শাপলা বিক্রি করতে হয় ১০ টাকায়।  

এদিকে উজিরপুরের শাতলার বাসিন্দা আনিস জানান, এখন বিলে সাদা শাপলার পরিমাণ কমে গেছে, লাল শাপলা বেশি। এ সময়টাতে বিলের ওপর নির্ভরশীল মানুষ পর্যটকদের লাল শাপলায় ঘেরা বিলের পানিতে নৌকায় ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পাশাপাশি কেউ কেউ মাছ শিকার করেন। তবে বিলের পানিতে প্রভাবশালীদের নজর পড়ায় এখন দেশীয় প্রজাতির মাছ যেমন অনেকটাই কমে গেছে, তেমনি দিনে দিনে শাপলার পরিমাণও কমে যাচ্ছে।

গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো মামুনুর রহমান বলেন, শাপলা জাতীয় ফুল হলেও সবজি হিসেবে শাপলার কদর রয়েছে। এছাড়াও শাপলা প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামসহ নানাবিদ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২০
এমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।